• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

তুরাগ তীরে আজ শুরু বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্ব

0001নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিশ্ব ইজতেমার  দ্বিতীয় পর্ব আজ শুক্রবার  থেকে শুরু হচ্ছে। রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের  মাধ্যমে এ বারের বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্ব সমাপ্ত হবে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা বুধবার থেকেই টঙ্গী তুরাগনদীর তীরে ইজতেমা মাঠে আসতে দেখা গেছে। এ পর্বেও বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা ও প্রস্তুতি আগের মতোই থাকবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ। শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে এসে উপস্থিত হচ্ছেন। তারা জেলাওয়ারী মাঠের খিত্তায় অবস্থান করছেন। মুসল্লিদের আল্লাহু আকবার জিকিরে ইজতেমাস্থলে আবারও ধর্মীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। মুসল্লিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের  সকল প্রস্তুতি গত বুধবারই শেষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখা গেছে জামাতবদ্ধ  হয়ে হাজার হাজার মুসল্লিরা মাঠে নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা মাঠে আসছেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ আশা অব্যাহত থাকবে। তবে এ পর্বের  মুসল্লিদের  জন্য পুরা ইজতেমা মাঠকে ২৭ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এপর্বে ঢাকাসহ ১৬ জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় যোগ দেবেন। ঢাকা জেলার মুসল্লি বেশি থাকায় এ পর্বেও তারা ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছন ইজতেমার মুরব্বী  গিয়াস উদ্দিন মানবজমিনকে জানান। ইজতেমা মাঠের মুরব্বী মাহফুজুর রহমান জানান, দ্বিতীয় পর্বে কোন্‌ জেলার মুসল্লি কোন্‌ খিত্তায় থাকবেন তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ওইসব জেলা ও খিত্তাগুলো হলো- ঢাকা (১-৭) নং খিত্তা, ঝিনাইদহ ৮নং খিত্তা, জামালপুর ৯ ও ১১নং খিত্তা, ফরিদপুর ১০নং খিত্তা, নেত্রকোনা ১২ ও ১৩নং খিত্তা, নরসিংদী ১৪ ও ১৫নং খিত্তা, কুমিলা ১৬ ও ১৮নং খিত্তা, কুড়িগ্রাম ১৭নং খিত্তা, রাজশাহী ১৯ ও ২০নং খিত্তা, ফেনী ২১নং খিত্তা, ঠাকুরগাঁও ২২নং খিত্তা, সুনামগঞ্জ ২৩নং খিত্তা, বগুড়া ২৪  ও ২৫নং খিত্তা,  খুলনা ২৬ ও ২৭নং খিত্তা, চুয়াডাঙ্গা ২৮নং খিত্তা এবং পিরোজপুর ২৯নং খিত্তা। ইজতেমাস্থলে নিরাপত্তা প্রথম পর্বের মতো জোরদার করা হয়েছে। ময়দান এলাকায় বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসানো রয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা ওইসব টাওয়ার থেকে ইজতেমাস্থল পর্যবেক্ষণ করছেন। আকাশে হেলিকপ্টারে ও তুরাগনদীতে স্পিড বোটে নৌ-টহলের ব্যবস্থাও রয়েছে আগের মতোই। এ ছাড়া মুসল্ল্লিবেশে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে ও খিত্তার মুসল্লিদের মাঝে অবস্থান করছেন। মাঠের প্রবেশ পথে ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকধারী পুলিশসহ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা কড়া নজরদারি করছেন। প্রতিটি গেট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরা বসানো হয়েছে। মাঠের উত্তরপাশে স্থাপিত র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম থেকে এসব ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।  র‌্যাব ছাড়াও পুলিশ ও জেলা প্রশাসন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ইজতেমা এলাকায় পৃথক কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে প্রবেশকালেও মুসল্লিদের (সন্দেহভাজনদের) মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে।  প্রথম পর্বের (বৃহস্পতিবার) মুসল্লিদের যে চাপ ছিল দ্বিতীয় পর্বের গতকালও চাপ লক্ষ্যণীয়। প্রতিটি খিত্তা আগের মতো পরিপূর্ণ হয়েছে।  বুধবার রাতেই বেশির ভাগ মুসল্লি মাঠে চলে আসছেন বলে ইজতেমা আয়োজকরা জানান। আগামী রোববার আখেরী মোনাজাতের আগ পর্যন্ত আশা অব্যাহত থাকবে।
গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাহিদ আহসান রাসেল জানান, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা প্রত্যেকটি মুসল্লির সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাদী সরকার অত্যন্ত সুন্দর সুচারুভাবে সম্পন্ন এবং সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। গতকাল ইজতেমা এলাকায় এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, কোনো ধরনের নাশকতা সহ্য করা হবে না। নাশকতাকারীদের কঠোরহস্তে ধমন করা হবে। অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মইন রহমান চৌধুরী দায়িত্বরত সকল পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান গতকাল সকালে ইজতেমায় স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তা এপর্বেও বহাল থাকবে বলে জানান। মাঠের ভেতর বাইরে সাদা পোশাক এবং পোশাকে পুলিশ, র‌্যাব, সার্বক্ষণিক নজরদারী  টহল রয়েছে। জেলা প্রশাসক এস.এম আলম বলেন, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি আগের মতোই রয়েছে। ছিনতাই, সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন অপরাধের জন্য ১৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান জানান, বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পূর্বের মতোই থাকছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ জানান, ইজতেমায় প্রথম পর্বে যে যে ব্যবস্থাদী গ্রহণ করা হয়েছিল তা আগের মতোই বাস্তবায়ন করা হবে।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন: এপর্বেও গতকাল থেকেই ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে মন্নু টেক্সটাইল মিলের মাঠে, বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের জন্য হামদর্দ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ইস্পাহানী ইসলামীয়া চক্ষু ইন্সটিটিউট, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতিসহ প্রায় ৫৪টি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করেছে। এগুলো আগের পর্বের  মতো এপর্বেও ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের আখেরি মোনাজাতের দিন পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাবে। টঙ্গী ওষুধ কল্যাণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপ্রতি এম,এ লতিফ বলেন প্রথম পর্বের ন্যায় এপর্বেও ৫-৬ হাজার রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাবো।

Print Friendly, PDF & Email