লাদেন হত্যা মিশনের মার্কিন সেনাদের ‘এমকে-১১ স্নাইপার’ রাইফেল বাংলাদেশে

01নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রামে জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার ফারদিন প্রকাশ পিয়াসের গোপন আস্তানা থেকে উদ্ধার করা আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্রটি দেশে এই প্রথম পাওয়া গেল বলে দাবি করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। ‘এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল’ নামে অত্যাধুনিক রাইফেলটি এর আগে বাংলাদেশে উদ্ধার হয়নি এবং ব্যবহারও হয়নি। এ অস্ত্রটি দিয়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে নির্দিষ্ট বস্তুকে টার্গেট করা সম্ভব। আর এই অস্ত্রটি আমেরিকার সৈন্যরাই ব্যবহার করে।
এর আগে গত শুক্রবার রাজশাহীর বাগমারায় একটি মসজিদে নামাজের সময় আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার বলেন, ‘উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক গুলির সঙ্গে যে অস্ত্রটি পাওয়া গেছে তা দেখে আমরা কিছুটা অবাক হয়েছি। এ অস্ত্র বাংলাদেশে আগে পাওয়া যায়নি এবং ব্যবহারও হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে আমেরিকার সৈন্যরা পাকিস্তানে আল কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার সময় এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে। বিরল এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রটি বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাতে চলে এসেছে। এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আতংকের বিষয়।’

এ ছাড়া হাটহাজারীর আমানবাজারের হাজি ইছহাক ম্যানশন নামে একটি দোতলা ভবন থেকে অভিযানে যে গোপন ও স্পর্শকাতর নথিপত্র পেয়েছে তাতে জঙ্গি সদস্যদের ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জারি করা একটি স্পর্শকাতর গোপন নির্দেশনাও রয়েছে। এসব নথিপত্র জঙ্গিদের কাছে কিভাবে পৌঁছল তা নিয়ে হতবাক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জেএমবির আস্তানা থেকে উদ্ধার করা একটি এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল, ২৫০ রাউন্ড গুলি, দুই কেজি জেল এক্সপ্লোসিভ, ১০টি ডেটোনেটর, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, ১৪টি সামরিক পোশাক, নেমপ্লেট ও ব্যাচ, র‌্যাংক এবং সাংগঠনিক বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা করে এবং আটক ৩ জেএমবি সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, জেএমবির সদস্যরা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

বাবুল আক্তার জানান, আমানবাজার এলাকায় যে বাসায় অভিযান চালানো হয় ওই বাসাটি ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেএমবির সামরিক কমান্ডার ফারদিনের আস্তানা এবং বোমা তৈরির কারখানা।

রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত চালানো অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এ কর্মকর্তা আরও জানান, ওই বাসা থেকে জেএমবির সদস্যরা বোমা তৈরি, অস্ত্র সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

পুলিশের অভিযানে জেএমবির তিনজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ধরা পড়েননি জেএমবির সামরিক কমান্ডার ফারদিন।

অভিযানের পর নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘আমানবাজারে জয়নব কমিউনিটি সেন্টারের পিছনে এক’শ গজ দূরে হাজি ইছহাক ম্যানশন নামে একটি দোতলা বাড়ি। এর নিচতলার বাসা ভাড়া নিয়ে আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন জেএমবির সামরিক কমান্ডার ফারদিন প্রকাশ পিয়াস। তবে অভিযানের আগেই সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’

বাড়ির মালিক হাজি মোহাম্মদ ইছহাক জানান, ‘ছয় মাস আগে নাফিস নামে এক যুবক বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি শহরে ব্যবসা করেন বলে জানান। তার স্ত্রী ও এক বছর বয়সী এক ছেলে আছে। ভাড়া নেওয়ার সময় তাদের বাড়ি ঢাকায় বলে জানিয়েছিল তারা।’

Print Friendly, PDF & Email