‘নিরাপদ স্বর্গে’ বিনিয়োগে নিয়ন্ত্রণ দাবি টিআইবির

dr.iftekharujjaman_9651নিজস্ব সংবাদদাতা : সম্প্রতি পানামার বহুজাতিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া ‘পানামা পেপারস কেলেংকারি’র ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ‘প্রকট দুর্নীতি-সহায়ক স্বচ্ছতার ঘাটতি’ বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি।

সংস্থাটি দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার ও তথাকথিত নিরাপদ স্বর্গে (Safe heaven) বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় কঠোরতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।

সোমবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পানামা পেপারস ফাঁস হওয়ার তথ্যে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সম্পৃক্ততা আরও একবার প্রমাণ করল- দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা থেকে কোনো দেশই মুক্ত নয়।’

তিনি বলেন, অন্যদিকে, কর ফাঁকি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের গভীরভাবে উদ্বেগজনক ঘাটতির পরিচায়ক। বিশেষ করে, যে সকল তথাকথিত উন্নত দেশে অর্থপাচারের মাধ্যমে সহজেই লগ্নি ও বিনিয়োগের সহায়ক ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সিয়াল অবকাঠামো বজায় রাখা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির প্রসারের জন্য তাদের দায় সবচেয়ে বেশি।

পশ্চিমা বিশ্বের নিরাপদ স্বর্গে ‘শেল কোম্পানি’র মালিক ও পরিচালক হওয়ার তথ্য গোপন রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, তা অবিলম্বে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে ইফতেখারুজ্জামান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান।

পানামা পেপারসের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনও না পাওয়া গেলেও তিনি সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে উদ্বেগজনকহারে টাকা পাচারের প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের নিরাপদ স্বর্গে পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনা এবং এ ব্যাপারে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান।

এক্ষেত্রে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক আইনি ও কারিগরি সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে বলে টিআইবি মনে করে।

সংস্থাটির ভাষ্যে, অর্থ পাচার রোধ করা, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করা জটিল হতে পারে। কিন্তু তা মোটেও অসম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সদিচ্ছা ও সক্রিয় উদ্যোগ।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) আন্তর্জাতিক বোর্ডের ততপরতায় পানামা পেপারসে চিলি ট্রান্সপারেন্সির চেয়ারপারসন গঞ্জালো দেলাভ্যু সোয়েতের সম্পৃক্ততার তথ্য প্রকাশের পর তার পদত্যাগের ঘটনাকে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি বা অনিয়মের যে কোনো অভিযোগের ব্যাপারে টিআই যে ‘শূন্য-সহনশীলতা’ নীতির যথাযথ বাস্তবায়নে সক্ষম, চিলি ট্রান্সপারেন্সির প্রাক্তন চেয়ারপারসন গঞ্জালো দেলাভ্যু সোয়েতের পদত্যাগের ঘটনা তারই একটি দৃষ্টান্ত।’

Print Friendly, PDF & Email