• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘চোর’ বলে তুলে নিল, মিলল দগ্ধ লাশ

219927_1চট্টগ্রাম, দেশনিউজ.নেট: গতকাল রাত একটা। কর্মস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন আশরাফ। আচমকা তিনটি মোটরসাইকেলে করে সাত-আটজন সন্ত্রাসী এসে আশরাফকে ‘চোর’ বলে মারতে থাকে। একপর্যায়ে টানাহেঁচড়া করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। আজ দুপুরে পাওয়া গেল তাঁর মৃত্যুর খবর।

কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম নগরের মাদারবাড়ির এসটি ট্রেডিং নামে একটি পরিবহন কোম্পানির মালিক হারুনুর রশিদ। আশরাফ এই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করতেন।

আজ শনিবার চট্টগ্রামের সকালে খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকায় রেলওয়ে ক্যানটিন গেটসংলগ্ন নর্দমা থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলের কলেজের মর্গে লাশটি তাঁর মা নাসরিন বেগম ও বোন মুন্নি আহমেদ শনাক্ত করেন। মুন্নি দাবি করেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাঁকে খুন করা হয়েছে।

পুলিশ ধারণা করছে, অন্য কোথাও হত্যা করে নর্দমার ভেতর ফেলে লাশে আগুন দেওয়া হয়।

হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘আমার অফিসের চারতলার জানালা থেকে আমার স্টাফ (কর্মচারী) সোহাগ সব দেখেছে। সে কয়েকজনকে চিনতে পেরেছে। আজ দুপুরে আশরাফের মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ পাই।’

এসটি ট্রেডিংয়ের কর্মচারী মোহাম্মদ সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চারতলার জানালা থেকে ৭-৮ জনকে দেখেছি। ওদের মধ্যে ৫-৬জনকে চিনতে পেরেছি। সন্ত্রাসীরা আশরাফ ভাইকে মারতে মারতে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যায়।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, রেলওয়ে ক্যানটিন গেটসংলগ্ন মাঠে শিশুরা ফুটবল খেলছিল। সকাল ১০টার দিকে একজন নর্দমায় পড়ে যাওয়া বল কুড়াতে গিয়ে লাশটি দেখতে পায়। এরপর এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। লাশটি নর্দমায় স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা ছিল।

লাশের সুরতহাল করেন খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান। তিনি জানান, লাশের পেটের ওপর দুই হাত ছিল। মাথা ছিল ডান দিকে ফেরানো। লাশের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। বিশেষ করে চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। চোখ দুটি ওপড়ানো। আগুনে গায়ে থাকা জামা ও প্যান্ট পুড়ে গেলেও পিঠের নিচের অংশে জামা অক্ষত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই যুবকের পা দুটি নাইলন রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। রশি পুড়তে পুড়তে পায়ের গোড়ালি দুটির হাড় বেরিয়ে গেছে।

নিহত আশরাফের কলেজ পড়ুয়া বোন মুন্নি আহমেদ গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, মর্গে এসে ভাইয়ের পেট ও আঙুল দেখে তাঁরা লাশ শনাক্ত করেন। কারণ, বছর তিনেক আগে দক্ষিণ খুলশীর চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাঁর ভাইয়ের ওপর দুই দফা হামলা চালিয়েছিল। একবার তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত করা হলে সেখানে কাটা দাগের চিহ্ন থেকে যায়। আর ছোট বেলায় আশরাফের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ ছিল না। পেটে কাটা চিহ্নের দাগ ও আঙুলের নখ নেই দেখে তাঁরা আশরাফের লাশ শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

আশরাফের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশরাফের পরিবার নগরের দক্ষিণ খুলশী এলাকায় বসবাস করতেন। এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার কারণে তাঁর ওপর দক্ষিণ খুলশীর বখাটে ছেলে রনি, জনি, সাদ্দাম, ওসমান গনিসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী ক্ষুব্ধ ছিল। তাঁকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করা হয়েছিল।’

এই বন্ধু আরও বলেন, ‘দক্ষিণ খুলশীর এই সন্ত্রাসীরা শুক্রবার দিবাগত রাত একটার পর আশরাফকে মাদারবাড়ির এসটি ট্রেডিং কার্যালয়ের সামনে থেকে ‘চোর’ বলে টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে মোটরসাইকেলে তুলে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যায়। রাতভর আমি নিজে পতেঙ্গা সৈকত, সাগর পাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে আশরাফকে আর পাইনি। দুপুরে পোড়া লাশের সন্ধান পেয়ে মর্গে গিয়ে আশরাফের মা ও বোনসহ লাশ শনাক্ত করি।’

মুন্নি আহমেদ বলেন, ‘ভাইয়ের ওপর বারবার হামলার কারণে আমরা দক্ষিণ খুলশীর বাসা ছেড়ে দিয়ে নদীর দক্ষিণপাড় কর্ণফুলী থানার ইছাপুরে বাসা ভাড়া করি। তারপরও ভাইকে রক্ষা করতে পারলাম না। দক্ষিণ খুলশী ও টাইগারপাস এলাকার সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে চেহারা বীভৎস করে দেয়। এর কি বিচার নেই?’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আশরাফের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে উদ্ধার করি আমরা। মর্গে তাঁর মা-বোন লাশটি শনাক্ত করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেওয়ার পর আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

Print Friendly, PDF & Email