• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

তিন ইয়াবা কারখানার মালিক মায়ার ছেলে রনি চৌধুরী

66189ঢাকা: সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে তিনি, নাম রনি চৌধুরী। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আন্ডারওয়ার্ল্ড। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কায়েম করেছেন ত্রাসের রাজত্ব। মাদক কারবারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে। ইয়াবা বানানোর অন্তত তিনটি কারখানা আছে তাঁর। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারি সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে রনি ও তাঁর গ্রুপের সদস্যরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও তিনি ব্যাপক মনোনয়ন-বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। র‌্যাব ও পুলিশ দিয়ে আটকে ভয় দেখিয়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে রনি চৌধুরীর বড় ভাই দিপু চৌধুরী নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজধানীর অপরাধজগৎ। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন রনি। অভিযোগ রয়েছে, রনি ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় আড়াই বিঘা জমি দখল করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করছে। এ জন্য সাবেক এক মন্ত্রীর ভাগ্নে সারোয়ারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের হাত করেছেন রনি। গভীর রাতে বাইরে থেকে মাটি এনে ভরাট করা হচ্ছে সেই জায়গা। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মহড়া দিচ্ছে ওই এলাকায়। আজমপুর কাঁচাবাজারও দখল করে রেখেছে রনির গ্রুপের সদস্যরা। তিনি গুলশান, তেজগাঁও ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে বানিয়েছেন ইয়াবা তৈরির কারখানা। সারা দেশে ইয়াবা বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে তাঁর গ্রুপের সদস্যরা।

‘সিসা হাউজ’ ও ইয়াবা কারখানা : গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এক মন্ত্রীর ভাই নাঈম ও ভাগ্নে সারোয়ার এবং রনি চৌধুরী মিলে ইয়াবা কারখানা বসিয়েছেন রাজধানীর গুলশানে। গুলশান-২ এর ৪৩ নম্বর সড়কে ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘সিসা হাউজ’। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে সিসাসহ নানা রকম মাদক বেচাকেনা চলে। পাশাপাশি চলে তরুণ-তরুণীদের উদ্দাম নৃত্য। তিন বছর ধরে কোনো বাধা ছাড়াই চলছে এ আখড়া।

সূত্র জানায়, কক্সবাজার ও টেকনাফে পুলিশ-র‌্যাবের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে রনি চৌধুরীর গভীর সখ্য রয়েছে। বাংলাদেশের সীমানাঘেঁষা মিয়ানমারের মংডু এলাকায় স্থাপিত ইয়াবা কারখানার কারিগর মোসলেমকে এনেই গুলশানের কারখানা বসানোর ব্যবস্থা করেছেন রনি চৌধুরী। এ কারখানা থেকে ঘণ্টায় আট থেকে ৯ হাজার ইয়াবা বড়ি প্রস্তুত করা হয়। এত দিন পুরনো মেশিন দিয়ে কারখানার কাজ চললেও বড়ির উৎপাদন বাড়াতে এখন নতুন মেশিনপত্র সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের কারিগর মোসলেম স্থানীয় এক যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছেন। ওই যুবক দুই সহযোগী নিয়ে ইয়াবা তৈরির কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সন্ধ্যায় যখন সিসা হাউজে উদ্দাম নাচ-গান চলে তখন সেই শব্দের আড়ালে চালু করা হয় ইয়াবা কারখানা। যাতে কারখানার শব্দ বাইরের লোকজন শুনতে না পায়। রাত ৮টা থেকে রাত দেড়টা-২টা পর্যন্ত সচল থাকে কারখানা। সেই হিসাবে প্রতি রাতে ওই কারখানায় ৫০ হাজারেরও বেশি ইয়াবা বড়ি প্রস্তুত হয়। পরে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সরবরাহ করা হয়।

রনি চৌধুরীর নেতৃত্বে ইয়াবার আরেকটি কারখানা বানানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর অদূরে। রনি চৌধুরীর পক্ষে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে গোদনাইল এলাকার তেল চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভাসমান ড্রেজিং বার্জের মধ্যেই ইয়াবা কারখানা স্থাপন করেছে। দুই বছর ধরে সেখানে ইয়াবা বানানো হচ্ছে। নৌপথেই সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ইয়াবার কাঁচামাল তারা টেকনাফ সীমান্তপথে মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করে। লবণ ও বালু বোঝাই বিভিন্ন ট্রলারের তেল মজুদের ছদ্মাবরণে ড্রাম ড্রাম ইয়াবার উপাদান আনা হয় কাঁচপুর এলাকায়। সেখানে ভাসমান ড্রেজিং বার্জে সেসব ড্রাম খালাস করা হয়।

সূত্র জানায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের অদূরে একটি ওষুধ কারখানার ভেতরেও রনি চৌধুরীর নেতৃত্বে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন ওই কারখানায় দুই লাখেরও বেশি ইয়াবা বড়ি উৎপাদন হয়। ‘জরুরি ওষুধ লেখা’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে ডেলিভারি ভ্যানগুলো রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যায়। নির্দিষ্ট ফার্মেসির সামনে এসব ডেলিভারি ভ্যান থামিয়ে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের হাতে চাহিদামাফিক ইয়াবার চালান তুলে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রনি চৌধুরীর মূল আস্তানা গুলশান, বনানী ও উত্তরা এলাকায়। তাঁর নেতৃত্বে রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ইয়াবার ব্যবসা করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে তারা। কারখানা থেকে ইয়াবার বড়ি সরবরাহ করা হয় উত্তরার বিভিন্ন রেস্তোরাঁসহ বাসাবাড়িতে। বনানী ও গুলশানেও রয়েছে তাঁর নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর ত্রাস মানিকের সঙ্গে তাঁর রয়েছে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। মালিবাগ এলাকাতেও রয়েছে রনি গ্রুপের বিশাল প্রভাব।

স্থানীয়রা জানায়, একসময় রনির বড় ভাই দিপু চৌধুরী পুরো উত্তরা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর দখলে ছিল উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব। ওই ক্লাবের আধিপত্য নিয়ে ১৯৯৭ সালের দিকে তিতাস নামে একজনকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় দিপু চৌধুরীসহ তাঁর সাঙ্গপাঙ্গোদের বিরুদ্ধে মামলা আছে।

পাউবোর জায়গা দখল করে মার্কেট : উত্তরার আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় পাউবোর প্রায় আড়াই বিঘার ওপর একসময় বস্তি ছিল। নাম ছিল আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মাঠ বস্তি। সূত্র মতে, মাস ছয়েক আগে বস্তিটি উচ্ছেদ করা হয়। একপর্যায়ে রনি চৌধুরী দলবল নিয়ে জায়গাটি দখলে নেন। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা দেখা গেছে, সেখানে মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে। টিনশেড ঘর তোলা হয়েছে। চারপাশে সীমানা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মাঝখানে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। তাতে লেখা ‘এতদ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে নিম্নবর্ণিত তফসিলভুক্ত ভূমি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অধিকরণকৃত জমি। উক্ত উচ্ছেদকৃত ভূমিতে কোনো প্রকার স্থাপনা না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইল।’ তবে পাউবোর সেই নির্দেশ অমান্য করেই মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। মার্কেট নির্মাণে কাজ করছে ২০-১৫ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে রমজান আলী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘মাসখানেক আগে মার্কেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাতের বেলায় মাটি ভরাট করা হয়। গভীর রাতে দামি গাড়িতে করে এক ব্যক্তি আসেন (রনি চৌধুরী)। তিনি সাইট ঘুরেফিরে চলে যান। এই সময় তাঁর সঙ্গে ২০-২৫ জন সশস্ত্র যুবক থাকে। তবে শুনেছি এটি সরকারি জায়গা। সরকারি দলের নেতারা এটি দখল করেছেন। আগে এটি বস্তি ছিল।’

স্থানীয় বাসিন্দা রফিক, রুহুল আমিন, আবদুর রহমানসহ অন্তত ১৫ ব্যক্তি জানান, রনি চৌধুরী তাঁর দলবল নিয়ে জায়গাটি দখল করেছেন। বস্তি উচ্ছেদ করার সময় বলা হয়েছিল, এখানে পাউবোর অফিস করা হবে। আর এখন প্রভাবশালীরা মার্কেট নির্মাণ করছেন। প্রতিদিন রাতের বেলায় সন্ত্রাসীরা এখানে নিয়মিত আসে। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা বাপ্পী নামের এক যুবককে সেখানে মারধর করে। এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে বলে, ‘আমরা রনি চৌধুরী ও ভাগ্নে সারোয়ারের লোক। টুঁ শব্দ করলে গুলি করে মেরে ফেলব।’

তবে দখলের ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবোর ফিল্ড অফিসার মিজানুর রহমান প্রথমে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে শুধু বলেন, ‘জায়গাটি আমাদের। তবে এখানে আমরা কোনো মার্কেট নির্মাণ করছি না।’
ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য : সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে রনি চৌধুরী চাঁদপুরের মতলব উত্তরে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মতলব উত্তরে ১৪টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ফরাজীকান্দি, সুলতানাবাদ, শাইকনল, বাগানবাড়ী, পূর্ব ফতেহপুর, পশ্চিম ফতেহপুর, জহিরাবাদ ও মোহনপুর ইউনিয়নে প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার নামে তিনি অর্থ নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপুর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, রনি চৌধুরীকে যাঁরা নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দিতে পেরেছেন তাঁরাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এমনকি মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিএনপির প্রার্থীদের কাছ থেকেও অর্থ নিয়েছেন তিনি।

আমিন হুদা গ্রুপের সঙ্গে সখ্য : বাংলাদেশে ইয়াবা ব্যবসা ও ইয়াবা তৈরির অন্যতম গডফাদার আমিন হুদা। তিনিই প্রথম দেশে ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন। জার্মানি থেকে ইয়াবার কাঁচামাল সংগ্রহ করে দেশেই ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন আমিন হুদা। ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর র‌্যাব গুলশান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে আমিন হুদা কারাগারে থাকলেও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা আছে বহাল তবিয়তে। তাদের মধ্যে জুবায়ের, আলী আকবর, শ্যামল মজুমদারসহ অন্তত ১৭ জনের একটি সিন্ডিকেট ঢাকায় ইয়াবা পাচার করে। তাদের সঙ্গে রনি চৌধুরীর সখ্য রয়েছে। তাদের সঙ্গে আতাত করেই রনি গ্রুপ ইয়াবা ব্যবসা করছে।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মহানগর উপ-অঞ্চলের এক উপপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাঘব বোয়ালরা ইয়াবার ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা নামে-বেনামে তৎপর আছে। একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলে ইয়াবা ব্যবসা করছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছে। তাকে নজরদারি করা হচ্ছে।’

সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে লেনদেন : নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেনের সঙ্গেও রনি চৌধুরীর সখ্য রয়েছে। র‌্যাব ১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ (চাকরিচ্যুত এবং সাত খুন মামলায় বর্তমানে কারাগারে) হলেন রনি চৌধুরী ভগ্নিপতি। সেই সুবাদে নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন রনি। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাত খুনের ঘটনার পর থেকে নূর হোসেনকে বাঁচানোর কথা বলে রনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। তা ছাড়া তারেক সাঈদের প্রভাব খাটিয়ে রনি কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের আটকের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ নিতেন।

মুন্সীগঞ্জের এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘২০১৩ সালে র‌্যাব একবার আমাকে গ্রেপ্তার করে। পরে রনি চৌধুরীর মাধ্যমে ছাড়া পাই। এ জন্য রনি চৌধুরীকে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। একইভাবে রনি অনেক নেতার কাছ থেকেই অর্থ নিয়েছেন।’
মাদকবিরোধী সংগঠনের ব্যানারেই মাদক ও দেহ ব্যবসা : সূত্র জানায়, উত্তরা রাজউক কাঁচাবাজার মার্কেটও রনি চৌধুরীর দখলে। সেখানকার প্রতিটি দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে তাঁর লোকজন। দক্ষিণখানে রনি চৌধুরী ‘বিলস’ নামে একটি মাদকবিরোধী সংগঠন গড়ে তোলেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সংগঠনের আড়ালে সেখানে চলে দেহ ও মাদক ব্যবসা। এ ক্ষেত্রে রনি চৌধুরীকে সহায়তা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক নেতা সরদার বেলায়েত হোসেন মুকুল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানার পুলিশ জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানায়, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর রোডের একটি আলিশান বাড়িতে রনি চৌধুরীর লোকজন নিয়মিত ইয়াবার চালান সরবরাহ করছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা পাচারকারীদের সঙ্গেও রনির সুসম্পর্ক রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রনি চৌধুরী পর্দার আড়ালে থেকে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে। মাসে মাসে তাঁরা রনির কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পান, বিনিময়ে চোখ বন্ধ রাখেন।

রনির সহায়তায় কারাগার থেকে পালানোর পরিকল্পনা তারেক সাঈদের : গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি তারেক সাঈদ তাঁর শ্যালক দিপু ও রনি চৌধুরীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় জেল থেকে পালানোর পরিকল্পনা করছেন। চিকিৎসার নামে তারেক সাঈদ ইতিমধ্যে দিনের পর দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আয়েশে কাটিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে শাহবাগ থানার পুলিশ একটি প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন সাব-ইন্সপেক্টর তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারেক হাসপাতালের পুরনো ভবনের তৃতীয় তলায় ৪৩ নম্বর কেবিনে ছিলেন দীর্ঘদিন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তারেক সাঈদের স্ত্রী পরিচয়ে রিফাত চৌধুরীসহ কয়েকজন স্বজন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বাধা দিলে তাঁরা গালাগাল করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রনি ও তার বড় ভাই তারেক সাঈদকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। তাদের মাধ্যমে তারেক দেশ ছেড়ে পালানোর পাঁয়তারা করছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তবে তাকে পুরো নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।’ – কালের কন্ঠ

Print Friendly, PDF & Email