• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কর্মক্ষেত্র গত এক বছরে দুর্ঘটনায় ৪২৬ শ্রমিক নিহত

281884_171নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে গত এক বছরে শুধু কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। মোট ৩২১টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় এসব শ্রমিক মারা যায়। ২০১৬ সালে ২৫৮টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মোট ৩৮২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল।

বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর পরিচালিত এক জরিপ করে এতথ্য দিয়েছে।

সংস্থাটি একইসাথে দেশে প্রথম ‘শ্রম পরিস্থিতি ও শ্রম অর্থনীতি ২০১৭’ বিষয়ক পর্যালোচনা-ভিত্তিক একটি রিপোর্টও প্রকাশ করে।

সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

সেকেন্দার আলী মিনা জানান, যেসব শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাইরে অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে আসা-যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তাদের সংবাদপত্র জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে নির্মাণ খাতে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক ১৪৪ জন, যা মোট নিহতের প্রায় ৩৪ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে পরিবহন খাত যেখানে ১০২ শ্রমিক (প্রায় ২৪ শতাংশ) নিহত হয়। ৯৬ শ্রমিক মারা যায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন- হোটেল, ওয়ার্কশপ, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি)। এছাড়া কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ৭৬ জন শ্রমিক। এ সময় আটজন কৃষি শ্রমিকও নিহত হয়েছে।

জরিপে উল্লেখ করা হয় যে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় যার সংখ্যা মোট ১১৭ জন। এছাড়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮৮ জন; ছাদ, মাঁচা বা ওপর থেকে পড়ে ৫৭ জন; শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ৩৯ জন; বয়লার বিস্ফোরণে ৩০ জন; সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জন; আগুনে পুড়ে মারা যায় ১৮ জন; বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য বিস্ফোরণে ১৬ জন এবং ছাদ/দেয়াল/মাটি/পাহাড় ধসে মোট ৩২ জন শ্রমিক মারা গেছে। এছাড়া অন্যান্য কারণে ১০ জন শ্রমিক মারা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পানিতে ডুবে যাওয়া; বজ্রপাত প্রভৃতি।

এব্যাপারে সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, মালিক তথা শ্রমিকের মারাত্মক অবহেলার কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে যা সহজেই এড়ানো যেত। উপস্থাপিত রিপোর্টে বলা হয় নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার না করে বিদ্যুতের কাজ করা, নিয়মানুযায়ী যথাযথভাবে মাচা তৈরি না করা, সড়কে নিয়ম না মানা, অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ঘাটতি, যথাযথ বয়লার না থাকা ইত্যাদি কারণে শ্রমিক নিহত হয়।

অপরদিকে ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি দাবি করে ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় নিহতদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড হওয়া দরকার যেখানে মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫ ও আইএলও কনভেনশন ১২১ বিবেচনা করতে হবে। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আরো চাপ প্রদান করা প্রয়োজন। তিনি কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের নির্যাতন এর তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা শ্রমিকের অধিকার উল্লেখ করে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন শ্রমিকের মজুরি যেমন বৃদ্ধি করা দরকার তেমনি কর্মক্ষেত্রে শোভন কর্মপরিবেশও নিশ্চিত করা দরকার যা আইএলও প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

বিল্স এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জনে আমরা এখনও পিছিয়ে।

Print Friendly, PDF & Email