• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

১১ মাসের রাবির ২৫ শিক্ষককে হত্যার হুমকি

0-2নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মোবাইল ফোনে চাঁদা চেয়ে গত ১১ মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২৫ জন শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। হুমকির এসব ঘটনায় শিক্ষকরা উৎকণ্ঠিত হলেও পুলিশ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। ফলে এ ধরনের হুমকির ঘটনা বেড়েই চলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, ‘হুমকি পেয়ে গত ১১ মাসে ২৫ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে হুমকি পাওয়া শিক্ষকদের সংখ্যা আরো বেশি হবে। কারণ, অনেকেই হুমকি পাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখেন। ঝামেলা এড়াতে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় বা পুলিশকে জানান না। তাই তাঁদের বিষয়টি প্রকাশ পায় না।’

প্রক্টর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী মণ্ডল ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমীন হামিদকে তাঁদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে গত বছরের ৫ মার্চ একই মোবাইল ফোন নম্বর (০১৯৫২৯৫৬৭৬৫) থেকে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এর পরের দিন একই মোবাইল নম্বর থেকে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আজাহার আলীকে ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি’ পরিচয় দিয়ে এবং একই বিভাগের অপর অধ্যাপক আখতার ফারুককে ‘চরমপন্থী গ্রুপের নেতা’ পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়।

এরপর ‘লাল বাহিনী, সর্বহারা পার্টি’ পরিচয়ে গত বছরের ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমকে হুমকি দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বার হুমকি পাওয়ার পর তিনি মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। ‘লাল বাহিনী’ পরিচয়ে ১৬ মার্চ বাংলালিংক নম্বর (০১৯৮৪৩৬৮৮৭৩) থেকে হুমকি দেওয়া হয় দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে। এ ঘটনার পরের দিনই তিনি মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

গত বছরের ২১ মার্চ ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুমদারকে দুটি মোবাইল নম্বর (০১৯৪৮০৬৩৩১৭ ও ০১৯৫৭৭৭৭০২৭) থেকে এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাসকে ০১৯৮৫৭৮৬৪৪১ নম্বর মোবাইল থেকে ‘পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি’ পরিচয়ে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।

গত বছরের ২২ মার্চ ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম সেলিম রেজাকে বাংলালিংক নম্বর (০১৯১০৪২৫৮৩৭) থেকে ‘লাল বাহিনী’ পরিচয়ে হুমকি দেওয়া হয়। পরের দিন ২৩ মার্চ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফয়েজার রহমানকে ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি’ পরিচয়ে এয়ারটেল নম্বর (০১৬২৩৮১৮৬৩৬) থেকে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়। ১০ জুলাই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসক ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদীকে মুঠোফোনে ‘জনযুদ্ধের কমান্ডার মেজর জিয়া’ পরিচয় দিয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এর দুদিন পর তিনি মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে গত ১৫ নভেম্বর ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি পরের দিন মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৭ নভেম্বর ‘০১৬২৫২৯৩২০১’ নম্বর থেকে ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ শাফিকে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এর আগেও তিনি মোবাইল ফোনে হুমকি পেয়েছিলেন। ২৮ নভেম্বর সেই একই নম্বর থেকে ইতিহাস বিভাগের আরো চারজন শিক্ষককে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাও গত বছর মুঠোফোনে হুমকি পান।

চলতি বছর ১১ ও ১২ জানুয়ারি একই মুঠোফোন নম্বর (০১৬৩০২৯৮১৫৭) থেকে বিভিন্ন পরিচয়ে হুমকি পান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষক। তাদের কাছে বিভিন্ন অঙ্কের টাকাও দাবি করা হয়। হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন হলেন- প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুল হক, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, এনিমেল হাজব্যান্ড্রি অ্যান্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম কামরুজ্জামান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌসি খাতুন ও আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মতিউর রহমান-২। এসব ঘটনায় গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অশোক চৌহান বলেন, ‘হুমকির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলো নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।’

দুবার মোবাইল ফোনে হুমকি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস বলেন, ‘মুঠোফোনে হুমকির পর স্বভাবতই গবেষণায় ভালোভাবে মন দেওয়া যায় না। শিক্ষার সার্বিক কার্যক্রমেও একটি খারাপ প্রভাব পড়ে। একবার হুমকি পাওয়ার পর যদি তাকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যেত, তাহলে দ্বিতীয়বার হুমকির ঘটনা ঘটত না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, ‘গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে মুঠোফোনে হুমকি পাওয়ার বিষয়ে প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ আসতে থাকে। অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে লিখিতভাবে সেগুলো রাজশাহী মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। এ ঘটনায় শিক্ষকরা থানায় আলাদাভাবে সাধারণ ডায়েরিও করেন।’ তবে অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ হুমকির বিষয়গুলো তদন্ত করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হুমকিদাতাকে ধরতে পারেনি বলে জানান প্রক্টর।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা নম্বরগুলো ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনিবন্ধিত সিম থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এজন্য তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।’ তাঁর মতে হুমকির ঘটনাগুলো আসলে তেমন কিছুই নয়। এগুলোতে শিক্ষকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

Print Friendly, PDF & Email