• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

`সরকার ও তার পুলিশ বাহিনী গণমাধ্যমে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে’

bfuj pic 1নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। সাংবাদিকদের আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। চ্যানেল-২৪ এর যুগ্ম বার্তা সম্পাদক এনামুল হকের ওপর নির্যাতন চালিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়ায় একটি পত্রিকা অফিসে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। ইউপি নির্বাচনে সাংবাদিকদের দায়িত্বপালনে বাধা দেয়া হচ্ছে। সরকার ও তার পুলিশ বাহিনী গণমাধ্যমে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে।
আজ (১ এপ্রিল) শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থিত ইউনিয়ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক  সমাবেশের ৪র্থ দিনে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র যৌথ উদ্যোগে শওকত মাহমুদ ও মাহমুদুর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া, সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিকের খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার, নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের দাবীতে এ সাংবাদিক সাবেশের আয়োজন করে।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, ইউপি নির্বাচনে দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লেও এ নির্বাচনের পক্ষেই আবার নির্লজ্জভাবে সাফাই গাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে দিন যাপন করছে। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলায় গণমাধ্যম রোষানলে পড়ছে। সম্পাদক, সাংবাদিকদের আটক  করে দিনের পর দিন কারারুদ্ধ করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ করায় কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে ক্ষমতা আকড়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান সরকার।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজে মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ, ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সহ-সভাপতি সৈয়দ আলী আসফার, সাংবাদিক নেতা কবি কামার ফরিদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবুল কালাম মানিক, সাখাওয়াত ইবনে মইন চৌধুরী, খন্দকার আলমগীর হোসেন, সরদার শাহাদাত হোসেন, মো. বোরহান উদ্দিন, মতিউর রহমান সরদার প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন- বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম। শিক্ষক কর্মচারি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া সমাশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। কারারুদ্ধ সাংবাদিকদের মুক্তি, বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া ও সাগর-রুনিসহ সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে তা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা চলছে। একের পর এক প্রহসনের নির্বাচন দেয়ায় দেশে নির্বাচনের উপর থেকে মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। ইউপি নির্বাচনে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লেও সরকারের টনক ছড়ছে না।
রুহুল আমিন গাজী  বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে এবং যতদিন আমাদের দাবি আদায় না হবে ততদিন চলবে। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ২৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে, এখনো একটা খুনেরও বিচার হয়নি। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক এনামুল হককে আটক করে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। আজ সারাদেশে সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
বিএফইউজে মহাসচিব এম.আবদুল্লাহ ছুটির দিনেও সমাবেশে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত হওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের প্রিয় সংগঠন রক্ষার জন্য এভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন কুচক্রী ও অপশক্তি কিছুই করতে পারবে না। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক এনামুল হকের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গত সাতবছরে দেশে অসংখ্য সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছে যার একটিরও বিচার হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনের সময় মুক্ত গণমাধ্যমের কথা চিন্তাও করা যায় না।
এম.আবদুল্লাহ আরো বলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিএফইউজে সভাপতি শওকত মাহমুদকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। সরকার যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাহলে এ পথ থেকে সরে আসতে হবে। সারাদেশের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে মাহমুদুর রহমান ও শওকত মাহমুদকে মুক্ত করে আনা হবে।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাংবাদিকদেরকে ভয় দেখিয় লাভ হবে না। সামনে সুসময় অপেক্ষা করছে, সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ  হয়ে মাঠে নামার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সর্বাত্মক আন্দোলনই অধিকার আদায়ের হাতিয়ার।
জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, সাংবাদিকদের প্রিয় সংগঠন ডিইউজে কার্যালয় যেমন আছে তেমনই থাকবে। কেউ যদি পূণরায় এদিকে নজর দেয়, এর পরিনতি হবে ভয়াবহ। আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরেছি, এরপর দাতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।
শিক্ষক কর্মচারি ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া বলেন, বিএফইউজে- ডিইউজে কার্যালয় পূনরুদ্ধারে আমি আনন্দিত। তিনি বলেন, আগেও বলেছি, আপনাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে আমরা আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। দখলদার অগনতান্ত্রিক কোনো শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয় না বলেও মন্তব্য করেন অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া।

Print Friendly, PDF & Email