• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় যৌথবাহিনী

0নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরামর্শ অনুযায়ী নয়া উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিমানবন্দরের কার্গো এরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে। নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রথম ধাপে যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ বাহিনীতে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১০০ জন সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জন পুলিশ, ৪০ জন বিমান বাহিনী ও ২০ জন আনসার বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এ সদস্য সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এ ছাড়া লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে মেশিন চালাতে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া অচল সিসি ক্যামেরা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য নতুন স্থান নির্ধারণ করা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, এয়ারপোর্টের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় সতর্ক রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নতুন করে নিয়োগকৃত যৌথ বাহিনী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (নিরাপত্তা)-এর নির্দেশে কাজ করবে। পাশাপাশি লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে মেশিন সচল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করবেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপে সরাসরি পণ্য রপ্তানি করতে এয়ার কার্গো সিকিউরিটি-৩ (এসিসি-৩) ও রেগুলেশন এজেন্ট-৩ (আরএ-৩) সনদ নবায়ন করেছে বাংলাদেশ বিমান। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইইউর শর্তানুযায়ী বিমানকে সনদ  দেয়া হয়। শর্তে বলা হয়েছে, শাহজালালে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে কার্গো শাখায় উন্নতমানের স্ক্যানিং মেশিন ও আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে। বিমানবন্দরে আসা লোকজনকে এসব মেশিনের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হবে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দেশের ফ্লাইট চালাতে হলে সে দেশের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশনের (এফএএ) ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র দরকার হয়। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এই ছাড়পত্র না থাকায় এখানকার কোনো বিমান সে দেশে যেতে পারছে না।
এদিকে স্ক্যানিং মেশিন ও আর্চওয়ে ব্যবহার নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কাস্টমস কর্মকর্তারা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস চালানোর নিয়ম কানুন মানছেন না। এ নিয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। এ ব্যাপারে কাস্টমস কমিশনার ও শাহজালালের নিরাপত্তা পরিচালকের কাছে লিখিত নালিশ জানানো হয়েছে। বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার নির্দেশ দিয়েছে, আর্চওয়ে ও স্ক্যানিং  মেশিন সবাইকে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সঙ্গে কোন সংস্থার বিরোধ থাকলে চলবে না। সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। দেশের স্বার্থেই শাহজালালে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের পর কূটনৈতিক কার্যক্রমে সহায়তাকারী প্রটোকল এসিস্ট্যান্টদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমপ্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছে, কূটনীতিক বা কর্মকর্তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত কিংবা বিদায় জানাতে সহায়তাকারী অনুমোদিত প্রটোকল এসিসট্যান্টরা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন গেট পর্যন্ত যেতে পারবেন। তাদের গেটের ভেতরে প্রবেশ করতে বারন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জরুরি ওই সার্কুলার ইস্যুর বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, আদেশের অনুলিপি মন্ত্রণালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা, ফরেন সার্ভিস একাডেমির কর্মকর্তা এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশের সব মিশনে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আগে প্রটোকল এসিস্ট্যান্টরা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত যেতে পারবেন। এতে কর্মকর্তা-বিশেষ করে তাদের পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের স্বাগত কিংবা বিদায় জানানোর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে পারতেন। নয়া ওই আদেশ ইস্যুর পর বিষয়টি নিয়ে দেশীয় কূটনীতিকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, দেশের প্রধান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বার বার অসন্তুষ্টির কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তারা নিরাপত্তা বাড়ানোরও তাগিদ দেয়। সম্প্রতি সারা বিশ্বে কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে তাগিদ দেয় এসব দেশ।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়ে বুধবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি এখনই না বাড়াই, শুধু বাড়ানো না, এটাকে একেবারে ভিজিবল করতে হবে। সেটা যদি না করি তাহলে আমাদের বিমান কিন্তু লন্ডনে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় কিন্তু আমরা এখনও (ফ্লাইট) পাঠাতে পারছি না। একটাই কারণে। এখনও কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এ গ্রেডে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়নি।’

Print Friendly, PDF & Email