আ.লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে কাল হলো বিএনপির!

downloadঢাকা, দেশনিউজ.নেট: রোববার হয়ে যাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সন্ডিকেট সদস্য, অর্থ কমিটি ও শিক্ষা পর্ষদ নির্বাচনে শতভাগ জয় পেয়েছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’। বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যতো নির্বাচন হয়েছে কোনোটিতেই এমন একচিটিয়াভাবে পুরো আওয়ামী প্যানেল জয়লাভ করেনি।

এ নির্বাচনে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের একটি অংশ আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। এ জোটের কারণেই আওয়ামীপন্থিরা এককভাবে পুরো প্যানেলে জয়লাভ করছে বলে মনে করছে জোট বিরোধী বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। তখন এ জোট নিয়ে ভরাডুবির আশঙ্কা করে নিউজ প্রকাশ হয়েছিল বাংলামেইলেও। নির্বাচনের ফলাফলও দেখা গেল তার প্রতিফলন।

বিগত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে মোট ১৫টি পদের মধ্যে বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা পেয়েছিলেন সাতটি পদ, গেল মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া চারটি অনুষদের ডিন নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপিপন্থি এক শিক্ষক (অধ্যাপক মোজাম্মেল হক)। নবনির্বাচিত সিন্ডিকেটের আগের সিন্ডিকেটেও বিএনপিপন্থি দু’জন শিক্ষক সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। কিন্তু এই সিন্ডিকেট নির্বাচনে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের শোচনীয় হারের কারণ হিসাবে দায়ী মনে করা হচ্ছে তাদের ভেতরকার অন্তর্কোন্দলকে।

৫ জুনের এ নির্বাচনের আগে বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। একটি পক্ষ চাইছিল জাতীয়তাবাদী প্যানেলে নির্বাচন করতে, অপরপক্ষ অধিক জয়ের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন। কিন্তু জোটবদ্ধ হয়ে একটিতেও তারা জয়লাভ করতে পারেনি।

জোটবদ্ধ নির্বাচনের পক্ষে অধ্যাপক মো. শামছুল আলম সেলিম বাংলামেইলকে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ‘ক্যাম্পাসের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রগতিশীল ও গণতন্ত্রমনা শিক্ষকদের নিয়ে গোষ্ঠী বিশেষের কবল থেকে ক্যাম্পাসকে রক্ষার স্বার্থে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করা হচ্ছে।’ তবে নির্বাচনে একটিতেও জয়লাভ করতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতির অঙ্গনে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

জোট বিরোধী নেতারা বাংলামেইলকে বলেন, অধিকাংশ বিএপিপন্থি শিক্ষকের মতামতকে উপেক্ষা করে একটি গোষ্ঠী আওয়ামীপন্থিদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিএনপির আদর্শকে পদদলিত করেছে। আমরা এর আগেও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করে ১৫টির মধ্যে সাতটিতে জয় লাভ করেছি। তাই এবারের নির্বাচনে একক প্যানেল দিয়ে আমাদের শক্তি জানান দেয়ার খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থবাদী শিক্ষকদের কারণে এককভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্বাচনে ভরাডুবির পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? উত্তরে অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিগত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করে ১৫টি পদের মধ্যে আমরা সাতটি পদ পেয়েছি। রুট লেভেলে আমাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে। এককভাবে নির্বাচন করাটা আদর্শিক ব্যাপার। এককভাবে নির্বাচন করলে সিন্ডিকেটেও আমরা ভালো করতে পারতাম। এ জন্য একমাত্র জাতীয়তাবাদী ফোরামের নেতারা দায়ী। সাধারণ সভায় ৮০ শতাংশ শিক্ষক এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও নেতারা সম্মিলিতভাবে নির্বাচনের পক্ষ নেন।’

অপরদিকে জোটবদ্ধ হয়েও জেতা যায়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয়তাবাদী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম সেলিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন মেকানিজমের কারণেই জেতা সম্ভব হয়নি। আমাদের একটা অংশ এক সাইড হয়ে গেছে। তাছাড়া প্রশাসন দলীয় বিবেচনায় প্রচুর পরিমান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে, যার সাথে ভারসাম্য রক্ষা করা যাচ্ছে না।’

Print Friendly, PDF & Email