কওমি শিক্ষার্থীদের ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিই কী করে?

মতিয়া চৌধুরী

কওমি শিক্ষার স্বীকৃতিকে যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই ব্যাখ্যা করছেন। এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিলে কথা হবেই। কিন্তু একটিবার কি আমরা ভেবে দেখেছি, কওমি কওমি বলে কাদের আমরা দূরে ঠেলে দিচ্ছি! তারা কি আমাদের সমাজেরই অংশ নয়? যদি তাই হবে, তাহলে তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াই উচিত নয় কি?

আমরা যারা রাজনীতি করি তারা নির্বাচনের সময় বেশি করে সাধারণ মানুষের দুয়ারে ধরনা দিই। তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করি। সে সময় কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও আমলে নিই। সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের কাছে ভোট চাই। অন্য রাজনীতিবিদরা কী করেন আমি জানি না, আমি আমার এলাকার সব কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহায়তা দিই। অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে সহায়তা করি তাদেরও সেভাবে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার ধারণা, অন্যরাও এটা করেন। কিন্তু তাঁরা এটা করলেও আজ বলছেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা করছি, সেটা সরকার করলে দোষ কোথায়? স্বীকৃতি পেয়ে ধীরে ধীরে তারা নিয়মের মধ্যে আসবে। আগে তাদের আস্থায় আনতে হবে। সেই কাজটিই সরকার শুরু করেছে। এখানে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। ফলে সবার মধ্যে আস্থার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে।

ফেইথ (ঋধরঃয) স্কুল কিসের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়? সারা বিশ্বেই ফেইথ স্কুলের উপস্থিতি রয়েছে। সরকারকে ধন্যবাদ না দিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। সেই সমালোচনা একপেশে হলে চলে কী করে? একপেশে এ কারণে খ্রিস্টান, ইহুদি বা অন্য যেকোনো ধর্মের অনুসারীরা যখন তাদের ধর্মের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালায়, তখন তো আমরা সমালোচনা করি না। তখন বরং সেসব প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করানোর জন্য প্রতিযোগিতায় নামি, তদবির করি। ভর্তি হতে আমাদের বাধে না। বাধে শুধু কওমি মাদরাসার উন্নতির জন্য কিছু করলে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে কিছু করলে জাত যায় অবস্থা।

ব্রিটিশ আমলে সম্রাট বাহাদুর শাহের পতনের পর থেকে এরা আমাদের আশপাশেই বেড়ে উঠেছে। অতিসম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের টাকা ছাড়া সমাজের অংশগ্রহণে বিভিন্ন অনুদান, জনহিতৈষী ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের দানে তারা টিকে আছে। ইংরেজের অপশাসনের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেছে। তারা যদি অন্তঃসারশূন্য হতো, ভিত্তিহীন হতো তাহলে এত দিন টিকে থাকত না। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে যারা চলছে, তাদের আমরা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিই কী করে? জনগণ নিয়ে রাজনীতি করার দৃষ্টিভঙ্গি এটা হতে পারে না।

২০১৩ সালে কওমির লোকজন যখন এসে রাজধানীতে উঠল তখন সবাই চুপ ছিল। কেউ তাদের কাজের সমালোচনা করেনি। তাদের থামানোর জন্য সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেদিন সরকারের পাশে এসেও দাঁড়ায়নি কেউ। অর্থাৎ তারা আসলে কওমির বিরোধী নয়, তারা শেখ হাসিনার সরকারের বিরোধী। সরকার কোনো কিছু করলেই তারা সেটার বিরোধিতা করে। তারা বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করে।

এই স্বীকৃতির ফলে শিক্ষার যে কারিকুলাম তাতে তারা যুক্ত হলো। এতে সব ধ্বংস হয়ে যায়নি। তাদের আস্থায় আনা হয়েছে। সরকার এটা না করলেও আমাদের সমাজ তাদের সঙ্গে নিয়েই চলত। নির্বাচনী এলাকায় পায়ে হেঁটে দেখেছি এদের বিস্তৃতি। আমাদের জীবনের বহু ক্ষেত্রে ঢুকে গেছে তারা। এই বাস্তবতা মানতে হবে।

লেখক : কৃষিমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সূত্র: কালেরকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email