• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দেবপ্রিয় ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব তলব

0001নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী ড. ইরিনা ভট্টাচার্যের গত ৮ বছরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
একই সঙ্গে তাদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ তথ্য জানতে চেয়েও চিঠি দিয়েছে রাজস্ব আহরণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার এনবিআর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে যে, বাংলাদেশে সুশীল সমাজের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে সরকার। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে সুশীল সমাজের অন্যতম প্রতিনিধি মনে করা হয়। রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি বেশি কথা না বললেও সরকারের আর্থিক নীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে দেবপ্রিয় ও তার প্রতিষ্ঠান কথা বলে থাকেন।

দেবপ্রিয় বলেছেন, তাকে হয়রানি করার জন্যই মূলত এনবিআরের এই তলব।
এনবিআরের পক্ষ থেকে গত ৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন এসব তথ্য চেয়ে দুটি পৃথক চিঠি প্রেরণ করেন।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে তাদের ব্যাংক হিসাব জানতে চেয়ে পাঠানো হয়েছে, অপরটি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লি. (সিডিবিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ তথ্য জানতে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, এসব চিঠি পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক ও সিডিবিএলকে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ১২৪(১) অনুযায়ী এককালীন ২৫,০০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে।

পাশাপাশি আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ১৬৪(সিসি) ধারা অনুযায়ী অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড আরোপে ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।–
আর চিঠি দুটিতে, ফ্ল্যাট-বি২, হাউজ-২এ, রোড-৬৩, গুলশান-২; ফ্ল্যাট-বি২, হাউজ-২এ, রোড-৬০, গুলশান-২; হাউজ-১৫৭, লেন-২২, ডিওএইচএস, মহাখালী; হাউজ-৪০/সি, রোড-১১(নতুন) ধানমণ্ডি আ/এ, ঢাকা-১২০৯।— এসব ঠিকানার কথাও উল্লেখ আছে।

বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে— দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের একক বা যৌথ নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাব, মেয়াদি আমানত হিসাব (এফডিআর ও এসটিডি হিসাবসহ যেকোনো ধরনের বা নামের মেয়াদি আমানত হিসাব), যে কোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যেকোনো ধরনের সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য যে কোনো ধরনের বা নামের হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত থাকলে ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী পাঠাতে হবে। এর পাশাপাশি পূর্বে ছিল কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে গেছে এমন হিসাবের তথ্যও পাঠাতে হবে।

এদিকে সিডিবিএলে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে— ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী ড. ইরিনা ভট্টাচার্য বা তাদের পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের একক বা যৌথ নামে যে কোনো বিও হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত হয়ে থাকলে ওই হিসাবের ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ বিবরণী জরুরি ভিত্তিতে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১১৩(এফ) ধারার ক্ষমতাবলে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি পূর্বে ছিল কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে গেছে এমন বিও অ্যাকাউন্টের তথ্যও পাঠাতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আদায় প্রবণতা অনেক কম। আর স্পেক্ট্রামের নিলামের অর্থও চলতি বছর পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হবে।

এদিকে, এনবিআরের এই তলব সম্পর্কে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই প্রথম না, এ ধরনের হয়রানিমূলক অভিজ্ঞতা আমার আগেও হয়েছে। ২০০২-০৩ সালে বিএনপি সরকারের সময় অর্থনীতি নিয়ে কথা বলার সময় এ ধরনের হয়রানি করা হয়েছিল। উনারা আইনানুগভাবে যতটুকু করতে পারবে, তা করুক।’

Print Friendly, PDF & Email