ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংস্কার বিপজ্জনকঃ ড. সালেহ উদ্দিন

salehuddin-নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার খু্বই বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার রাজধানীর ব্রাক সেন্টারে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত : সংস্কার ও সুশাসন’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। দি ঢাকা ফোরাম ও ওয়ান ব্যাংক সেমিনারটির আয়োজন করে।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর সংস্কারে রাজনৈতিক দৃঢতা জরুরি। একমাত্র রাজনৈতিক দৃঢ়তাই ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ফেরাতে পারে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বসানোর আগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যাতে না করেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। এতে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিতে সহায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এসএমই ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে । কিন্তু যতটুকু প্রচার করা হচ্ছে, সেভাবে প্রকৃত উদ্যোক্তারা এ ঋণ পাচ্ছেন না। আসলে কয়জন প্রকৃত উদ্যোক্তা এসএমই ঋণ পাচ্ছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা উচিত।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজশাহীতে আমার এক বন্ধু এসএমই ঋণের জন্য ৬ মাস একটি ব্যাংকের পিছনে দৌড়েছে। তারপর তিনি ১০ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। অথচ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এসএমইর আওতায় ঋণ নিতে সময় লাগে না। ব্যাংকগুলোও তাদেরকে ঋণ দিতে কালক্ষেপণ করে না।

তিনি বলেন, এসএমই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে এভাবে কালক্ষেপণ করলে প্রকৃত উদ্যোক্তারা ব্যবসার মূল স্রোতে উঠে আসার আগেই হারিয়ে যাবে। তাই প্রকৃত উদ্যোক্তাদের হয়রানি ছাড়া ঋণ দিলে সুশাসনের সহায়ক হবে।

সালেহ উদ্দিন আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশি চাপে থাকেন। অন্যান্য চাপের চেয়ে লবিস্টদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ে। এ চাপের ফলে অনেক ভালো আইন থাকলেও তা প্রয়োগে শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সাধারণত ইক্যুয়িটির চেয়ে ঋণ প্রদান বিনিয়োগ বেশি পছন্দ করে। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠান কিছু ট্যাক্স মওকুফের সুবিধা পায়। এতে শিল্প কারখানাগুলোর আর্থিকভাবে দুর্দশা বাড়তে থাকে। তাই দেশের ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদান বিনিয়োগ না করে ইক্যুয়িটি বিনিয়োগের দিকে যেতে হবে।

গোল টেবিলে ইস্যু পেপারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কার তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে: নীতি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, আইন সংস্কার। নীতি সংস্কারে মধ্যে ঝুঁকি ভিত্তিক মূলধনের পর্যাপ্ততা, ঋণ শ্রেণিকরণ এবং প্রভিশনিং, ঋণের ঝুঁকি শূন্য, সুদের হার বিনিয়ন্ত্রণ, কর্ম পরিকল্পনায় সংস্কার।

এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মধ্যে অফ সাইট সুপারভিশন, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি)এবং লার্জ লোন রিপোটিং সিস্টেম সংস্কার। অপরদিকে, আইন সংস্কারের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১, অর্থঋণ আদালত,১৯৯০ এবং দেউলিয়া আইন,১৯৯৭ সংস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গোল টেবিল আলোচনায় বক্তরা, কর্পোরেট সুশাসনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এ সম্পর্কে বক্তরা বলেন, কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ফাইন্যানন্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট পাস হলেও এর বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে। এর বাস্তবায়ন তরান্বিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বীরূপক্ষপাল, দি ঢাকা ফোরামের সদস্য সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট এর মহাপরিচালক প্রফেসর তৌফিক এ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email