অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ বিশ্বব্যাংকের

ঢাকা : অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ না হলে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে করের টাকা ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতেরও তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (২২ জুন) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর এই বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিও ফান।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সুদ, বেতন ভাতা ও ভর্তুকি বাবদ ব্যয়ের হার বেড়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখতে হয়েছে।’

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘বাজেটে সুদ পরিশোধে ব্যয় দিন দিন বাড়ছে, যা দেশের জন্য সুসংবাদ নয়। এটি এখন ব্যয়ের খাতে তিন নম্বরে চলে এসেছে। কারণ সুদের বোঝা বাড়ছে। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বাড়ানো হচ্ছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। বাস্তবায়নের মান ও ক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার খুব বড় নয়। কিন্তু এটি আরও ভাল করার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া জিডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জনযোগ্য, অসম্ভব কিছু নয়। তবে এজন্য নীতিমালায় সংস্কার আনতে হবে বলে জানান ড. জাহিদ।

বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে আরও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ দরকার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আয়ের যে টার্গেট ধরা হয়েছে তা অনেক উচ্চাবিলাসী। তবে করের টাকা কোন খাতে কিভাবে ব্যয় হবে তা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়নের নামে যে বিনিয়োগ হচ্ছে তার মান নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষার বিনিয়োগ থেকে মানসম্মত শিক্ষা আসছে কি না তা দেখতে হবে।’

ড. জাহিদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির যে ফোরকাস্টিং (পূর্বাভাস) করা হয় তাতে গলদ রয়েছে। এ কারণে রাজস্ব আয়ের ফোরকাস্টিংয়ে গলদ থেকে যাচ্ছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সবসময় বেশি মাত্রায় ধরা হয়। ফলে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা অর্জন করা কঠিন। ১ টাকা জিডিপি বাড়াতে হলে রাজস্ব ২ টাকা ৮০ পয়সা বাড়াতে হবে, যা নিকট অতীতে কোনো রেকর্ড নেই বলে বিশ্বব্যাংক মনে করছে।

তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে বিনিয়োগকে বেগবান করতে হবে। সেটা করতে হলে যোগান বাড়িয়ে, জ্বালানি বাড়িয়ে, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও শ্রম শক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে।’

৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। বাজেটে টার্গেট অর্জনের সুযোগ আছে, তবে পাইপ লাইনে অর্থছাড়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। গত মার্চ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে মাত্র ১৫.৪ শতাংশ। এই ধারাতে হলে সম্ভব নয়। আর বাস্তবায়নের হার না বাড়ালে ছাড়ও কম হবে বলে জানান ড. জাহিদ।

Print Friendly, PDF & Email