সিরিয়ার ঘৌটায় নিরীহ সুন্নী মুসলীম হত্যয় মেতেছে আসাদ বাহিনী, ইরান ও রাশিয়া: আল জাজিরার বিশ্লেষণ

SIRIYAনিউজ ডেস্ক:সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী জেলা শহর পূর্ব ঘৌটায় প্রায় ৪ লাখ বেসামরিক মানুষকে আটকে রেখেছে সরকারি আসাদ বাহিনী ও তার মিত্ররা। ঘৌটা থেকে বিদ্রোহীদেরকে সরিয়ে দিতে সেখানে তারা বিমান হামলা চালাচ্ছে। স্থল বাহিনীও মোতায়েন করেছে সরকারি আসাদ বাহিনী ও তার মিত্ররা। সিরিয়ার এই এলাকাটিতে বর্তমানে কী হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। কী হচ্ছে ঘৌটায়? আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব ঘৌটা হলো সিরিয়ার রাজধানীর নিকটবর্তী বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ও শক্তিশালী ঘাটি। দেশটির সরকারি বাহিনী ২০১৩ সাল থেকেই এলাকাটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। দীর্ঘদিন দরে খাদ্য ও ওষুধের অভাবে সেখানে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং মানুষ তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভোগছে। ২০১৭ সালে তুরস্ক, রাশিয়া ও ইরান একমত হয়ে ঘৌটাকে ‘ডি-এসকেলেশন জোন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। যাতে রাশিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধ বিমান আর ওই এলাকার দিয়ে উড়বে না এটাই প্রত্যাশা ছিল তাদের। এরই মধ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ার সৈন্যরা রাশিয়ার সামরিক বিমানের সাহায্যে ঘৌটায় নির্দয়ভাবে হামলা চালায়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের হামলায় নারী-শিশুসহ কয়েকশ বেসামরিক লোক নিহত হয়। তাদের টার্গেট এলাকার প্রান্তে পৌঁছার লক্ষ্যে করতে একই দিনে ব্যাপক হামলা চালিয়ে স্থল বাহিনী অগ্রসর হয়। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ঘৌটার এক ইঞ্চ ভূমিও নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। সরকারি বাহিনী হামলায় মর্টার শেল, ব্যারেল বোমা, ক্লাস্টার বোমা এবং বম্বার বিস্ফোরণ অস্ত্র ব্যবহার করছে। হোয়াইট হেলমেটস নামে দেশটির সিভিল ডিফেন্স জানায়, কয়েকটি শিশু ক্লোরিন গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সেখানে ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার হয়েছে। তবে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গে লেভরব ক্লোরিন গ্যাসের অভিযোগকে ‘বোগাস স্টোরি’ বলে মন্তব্য করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি বাহিনীর এই বিমান হামলায় ঘৌটায় ৬টি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেছে। আর তাদের এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল। অপরদিকে, ৩০ দিনের জন্য সিরিয়ার ঘৌটায় হামলা বন্ধ রাখার পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। প্রস্তাবে অনতিবিলম্বে হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। কত লোক মারা গেছে? তুর্কি গণমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার পর্যন্ত সিরিয়ার ঘৌটায় সরকারি বাহিনীর বিমান ও স্থল হামলায় ৭০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮৫ শিশু ও ১০৯ জন নারী রয়েছেন। আর সিরিয়ার সরকার বলছে, সন্ত্রাসীরা বেসামরিক লোকদেরকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ঘৌটা টার্গেট কেন? ঘৌটা জেলাটি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। রাজধানীর এত কাছাকাছি থাকার কারণে ঘৌটা এলাকাটি সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাটি সরকার দখলে নিতে হামলা চালাচ্ছে। ১০৪ কিলোমিটার বর্গের জেলাটিতে প্রায় ৪ লাখ লোকের বসবাস। যাদের অর্ধেকই ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু।
Print Friendly, PDF & Email