যৌন সুবিধার শর্তে ত্রাণ!

reliefনিজস্ব প্রতিবেদকঃ যুদ্ধে আক্রান্ত মানুষের ক্ষুধাকে পুঁজি করে যৌন নিপীড়নের অস্ত্র বানানো হচ্ছে সিরিয়ায়। ত্রাণ পেতে গেলে সেখানকার নারীদের মেনে নিতে হচ্ছে নিপীড়নের বাস্তবতা। যৌন নিপীড়নের শিকার হতে সম্মত না হলে ত্রাণ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না নারীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ধারাবাহিক সতকর্তা সত্ত্বেও বদল ঘটেনি এই বাস্তবতার। জানা গেছে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংস্থার হয়ে যারা ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব পালন করছে, তারাই এসব ভয়াবহ নিপীড়নের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ’র নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনেও ইউএনএফপিএ’র দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো তৃতীয় পক্ষের লোকজনকে ভাড়া করার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করে থাকে। আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীরা ২০১৫ সালেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ত্রাণের বিনিময়ে যৌন সুবিধা আদায়ের ঘটনা ঘটছে।

ডানিয়েল স্পেন্সার নামে একটি দাতব্য সংস্থার উপদেষ্টা সেসময় কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বিবিসিকে তিনি জানান, দারা এবং কুনেইত্রার স্থানীয় কাউন্সিলের পুরুষ কর্মীরা ত্রাণসামগ্রী আটকে রেখে নারীদের যৌন কাজে ব্যবহার করে। এবার জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ’র চালানো নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় ‘ত্রাণের বিনিময়ে যৌন সুবিধা নেওয়া’ অব্যাহত রয়েছে। সিরিয়ায় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে গত বছর ওই জরিপ পরিচালনা করেছিল (ইউএনএফপিএ)।

আন্তর্জাতিক ত্রাণ কর্মীদের অভিযোগ, সিরীয় নারীদের খাদ্য, সাহায্য এবং গাড়িতে করে কোথাও পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ওই লোকেরা যৌন সুবিধা নেয়। ইউএনএফপিএ’র ‘ভয়েসেস ফ্রম সিরিয়া ২০১৮’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, একবেলার খাবার পেতে সিরিয়ান নারী বা অল্পবয়স্ক মেয়েরাও অল্প কিছু সময়ের জন্য কর্মকর্তাদের বিয়ে করে ‘যৌন সেবা’ দিয়েছে। কোথাও ত্রাণ বিতরণকারীরা মেয়েদের কাছে তাদের ফোন নাম্বার চেয়েছে, কেউ বা গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেবার বিনিময়ে ‘কিছু একটা’ চেয়েছে। অনেক নারীকে ত্রাণ দেওয়ার বিনিময়ে ‘তার বাড়িতে যাবার’ বা ‘তার সঙ্গে এক রাত কাটানোর’ ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত নারী বা অল্পবয়সী মেয়ে, ‘যাদের কোন পুরুষ রক্ষক নেই’– তাদেরকে বেশি এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউএনএফপিএ’র প্রতিবেদন নিয়ে সিরিয়ায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিও।

ত্রাণকর্মীরা বিবিসিকে বলেছেন, যৌন শোষণ সেখানে এতটাই ব্যাপক যে কিছু সিরিয়ান নারী ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রেই যেতে চান না। তাদের আশঙ্কা, বিতরণ কেন্দ্র থেকে ত্রাণ নিয়ে এলে লোকজন ভাববে তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছে। একজন ত্রাণকর্মী দাবি করেছেন, লোকজনের হাতে ত্রাণ পৌঁছানোর স্বার্থে তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করেছিলেন।

এ ব্যাপারে বিবিসির সাথে কথা বলার সময় জাতিসংঘ এবং দাতব্য সংস্থাগুলো এরকম ঝুঁকির কথা স্বীকার করেছে। তবে তাদের দাবি, এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে এবং ওই অঞ্চলে নিয়োজিত তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মীরা এ ধরনের কাজে লিপ্ত বলে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email