সাক্ষী ছিল না, তবু গোলাম রসুল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় দিয়েছেন : বিচারপতি সিনহা

cj_sk_sinha_8588আদালত প্রতিবেদক : প্রধান বিচারাপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগ কোনো দিনই পিছপা হবে না এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বিচার বিভাগ এগিয়ে এসেছে। যেখানে অন্যায় দেখেছে সেখানে হস্তক্ষেপ করেছে।’

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রথমবারের মতো রক্তদান ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।

সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের পাশাপাশি আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও আদালতের কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, জেল জুলুম, ছেলে, মেয়ে পরিবার আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে এতো আত্মত্যাগের পরও বঙ্গবন্ধুকে কতিপয় বিপথগামী সৈন্য এরকম হত্যা করতে পারে! যাই হোক শুধু তাকে হত্যা করা হলো না, হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য তৎকালীন সরকার ইনডেমিনিটি (দায়মুক্তি) অর্ডিনেন্স জারি করেছিল। এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। এরপর এই বিচার বিভাগ তখনকার বিচার বিভাগকে অনেকে সমালোচনা করেছে। স্বৈরাচারী সরকার ইয়ে (নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা) করেছিলো, আমাদের সিনিয়র জাজরা তখন কিন্তু পিছপা হননি। এই কালো আইন বাতিল করলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে খেয়াল করবেন সাক্ষী ছিলো না, কত কষ্ট করে আমাদের একজন জেলা জজ মরহুম কাজী গোলাম রসুল তখনকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রায় দিলেন। এরপরে হাইকোর্টে ডেথ কনফারমেশনরে জন্য প্রতিকূলতা ছিলো। এটা আমি আর বলতে চাচ্ছি না। এটার ডেট ফিক্সড করা, বেঞ্চ গঠন করা এটা একটা নাটক ছিল।

অনেক বিচারপতিই এই মামলায় বেঞ্চে অন্তর্ভুক্ত হতে চাননি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, একটা ঘটনা নিয়ে জাজেস লাউঞ্জে কনফাইন (আটকা) ছিলাম। আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি উনি এদিকে কর্নপাত করেননি। জাজেস লাউঞ্জের পেছনের দরজা দিয়ে আমাদের ব্রাদার জাজেস একজন একজন করে মতামত নিচ্ছেন। কেউ রাজি ছিলেন, কেউ রাজি ছিলেন না। বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা এ ঘটনার সাক্ষী। এরপর বিচার সম্পন্ন হলো। আমি সৌভাগ্যবান ওই প্রক্রিয়ায় আমি একজন সদস্য ছিলাম।

দেশের ক্রান্তিলগ্নে বিচার বিভাগের ভূমিকা সম্পর্কে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ হিসেবে অনেকে স্বীকৃতি দিতে পিছপা হতেন। আমরা কোনোদিনই এটা প্রকাশ করিনি। প্রশাসন ও জাতীয় সংসদের পাশাপাশি বিচার বিভাগ যে একটা অঙ্গ, সেটাকে প্রকাশ করা আমাদের কর্তব্য। আজকে আপনারা খেয়াল করবেন বিচার বিভাগ শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা না আমরা জেল হত্যা মামলারও রায় দিয়েছি। ৮ম, ৫ম, ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে রায় দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত ১৬তম সংশোধনী যেটা বিচারাধীন আছে সেটা নিয়ে কথা বলবো না।

১৫ আগস্ট শোক দিবসকে ঘিরে এসময় রক্তদান কর্মসূচি ও বৃক্ষরোপণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। রক্তদান কর্মসূচিতে সহায়তা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ও আইনজীবীদের পাশাপাশি চার বিচারপতিও স্বেচ্ছায় রক্ত দেন।

স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়া বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি আশরাফুল কামাল, বিচারপতি ভীস্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির।

Print Friendly, PDF & Email