ট্রাফিক সার্জেন্ট মুস্তাইনের মাস্তানি, ফটো সাংবাদিক নাসির লাঞ্ছিত

FB_IMG_1507734079819নিজস্ব প্রতিবেদক:  রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে নাসির উদ্দিন নামের দৈনিক মানবজমিনের এক ফটো সাংবাদিককে তুচ্ছ কারণে পুলিশ বক্সে আটকে মারধর করেছে এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। পরে সিনিয়র সাংবাদিকরা গিয়ে তাকে মুক্ত করেন। দায়ী সার্জেন্টেকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ।

বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মৎস্য ভবন সিগন্যালে মানবজমিনে কর্মরত ফটো সাংবাদিক নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে। নাসির জানান, তিনি বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মোটরসাইকেলে করে প্রেসক্লাব থেকে অফিসে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জনকণ্ঠের ফটো সাংবাদিক জীবন ঘোষ। মৎস্য ভবনে সিগন্যালে আসার পর সার্জেন্ট মুস্তাইন মোটরসাইকেল থামিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাগজপত্র দেখতে চান।

ফটো সাংবাদিকের ওপর চড়াও সার্জেন্ট মুস্তাইনফটো সাংবাদিকের ওপর চড়াও সার্জেন্ট মুস্তাইন

এগুলো দেখানোর পরও সার্জেন্ট মামলা দিচ্ছিলেন। নাসির বলেন, ‘আমি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সার্জেন্ট জানান, হেলমেট নেই বলে মামলা দিচ্ছেন। তখন তাকে আমি বলি, “ভাই, কয়েকদিন আগে আমার হেলমেট হারিয়েছে, আমি দ্রুত হেলমেট কিনে ফেলবো।” তারপরও তিনি মামলা দেন। আমি আবার অনুরোধ করলে তিনি আমাকে “হলুদ সাংবাদিক” বলেন।’

নাসির জানান, এরপর তিনি ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে হাতে নিতেই সার্জেন্ট তার গেঞ্জি টেনে ধরে ক্যামেরা কেড়ে নেন এবং কিল-ঘুষি দিতে দিতে তাকে পুলিশ বক্সের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে নিয়েও তাকে থাপ্পড় দেন। এসময় তার সঙ্গে থাকা জীবন ঘোষ এই মারধরের ছবি তুলতে গেলে তাকেও ধাওয়া দেন এবং অন্য ট্রাফিক পুলিশদের তাকে ধরতে বলেন। জীবন ঘোষ তখন দৌঁড়ে পালিয়ে প্রেসক্লাবের দিকে চলে যান। সার্জেন্ট ‍মুস্তাইন ফটো সাংবাদিক নাসিরকে পুলিশ বক্সে আটকে রেখে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং তার বিরুদ্ধে আরও মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। এসময় আরও ৪/৫ জন ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ঢুকে তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন।

ক্যামেরা কেড়ে নিচ্ছেন ট্রাফিক সার্জেন্টক্যামেরা কেড়ে নিচ্ছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট

জীবন ঘোষ প্রেসক্লাবে গিয়ে সিনিয়র সাংবাদিকদের বিষয়টি জানালে প্রায় আধাঘণ্টা পর মানবজমিনের প্রধান ফটো সাংবাদিক শাহীন কাওসারসহ অন্য সাংবাদিকরা পুলিশ বক্সে যান। তারা গিয়ে বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরপর পুলিশ কর্মকর্তা ও সিনিয়র সাংবাদিকদের মাধ্যমে পুলিশ বক্স থেকে ছাড়া পান নাসির।

সার্জেন্ট মুস্তাইন ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মো. আব্দুল খালেকের সঙ্গে শাহবাগ ও মৎস্য ভবন জোনে কাজ করেন। এ বিষয়ে আব্দুল খালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। ঘটনার পরপর আমাদের ট্রাফিক দক্ষিণের সহকারী কমিশনার (এসি) হারুন অর রশীদ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে মীমাংসা করা হয়েছে। তখনই ঘটনাটি শেষ হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে কি?’

এভাবেই ধাক্কা দিয়ে সাংবাদিককে পুলিশ বক্সে নিয়ে যান সার্জেন্টএভাবেই ধাক্কা দিয়ে সাংবাদিককে পুলিশ বক্সে নিয়ে যান সার্জেন্ট

এসি হারুন অর রশীদ এ বিষয়ে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পরপরই সার্জেন্টকে প্রত্যাহার করে ট্রাফিকের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীমের দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দুই পক্ষের অভিযোগ শুনেছি। ফটো সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, তাকে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু সার্জেন্ট বলেছেন, তিনি মামলা দিচ্ছিলেন, তখন সাংবাদিক নাসির ছবি তুলছিলেন। ছবি তোলা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তিনি গায়ে হাত তুলেনি। তবে যেহেতু সার্জেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাই তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এখন ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে।’

Print Friendly, PDF & Email