নৌবাহিনীতে আগামী বছরেই দুটি সাবমেরিন যুক্ত হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

00001নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশ নেভিতে দুটি সাবমেরিন যুক্ত হবে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হবে। তিনি বলেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ নেভিতে দুটি সাবমেরিন যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে এবং পটুয়াখালীর রবনাবাদে এভিয়েশন সুবিধা সম্বলিত দেশের এই বৃহত্তম নৌ ঘাটি স্থাপন করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী প্যারেড গ্রাউন্ডে একাডেমীর কোর্স সমাপনী কুচকাওয়াজ প্রেসিডেন্ট প্যারেড অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শ্রীলংকা থেকে একজন এবং ২৪ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার্স (ডিইও)সহ মোট ৫৩ জন মিডশিপম্যান এ বছর কমিশন লাভ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে নৌ-বাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব এবং চট্টগ্রাম নেভাল এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আখতার হাবিব তাকে অভ্যর্থনা জানান।

মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সিনিয়র সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, কূটনীতিকবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং নতুন কমিশন লাভ করা মিডশিপম্যানদের অভিভাবকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্যারেড অনুষ্ঠানে মিডশিপম্যানদের ব্যাচ ও নৌবাহিনীর বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট পাসিং আউটে অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী একাডেমীতে অসামান্য দক্ষতা প্রদর্শনকারী সেরা মিডশিপম্যানদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

মিডশিপম্যান ফাহিম উদ্দিন সাকিব সেরা মিডশিপম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিনি ‘সোর্ড অব অনার’ গ্রহণ করেন এবং একাডেমীতে সেরা ফলাফলের জন্য এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট এম রেহানুজ্জামান লাভ করেন শহীদ মোয়াজ্জেম পদক।

পেশাগত ও শিক্ষাগত বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনের জন্য মিডশিপম্যান জাহিদ হোসেন কবির বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক এবং মিডশিপম্যান এম রেজাউল ইসলাম নেভাল চিফ স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেভাল একাডেমিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ চলছে। তিনি বলেন, চীনের তৈরি দুটি কর্ভেটশিপ ‘প্রত্যয়’ ও ‘স্বাধীনতা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ফ্রিগেট ‘সমুদ্র অভিযান’ আগামী মাসে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে।

পাশাপাশি সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধকালে শহীদ নৌ-কমান্ডারদের আত্মত্যাগের স্মৃতি সংরক্ষণে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ‘বিজয় তরঙ্গ’ নামে একটি জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

শেখ হাসিনা ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে এবং দেশের ও বাহিনীর ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নতুন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের মতো তরুণ অফিসাররা আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন যাত্রার অংশীদার। তাই, আপনাদের ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে নৌবাহিনীর এবং দেশের ভাবমূর্তি ও ঐতিহ্য ম্লান হয়।’
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার জন্য নতুন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের নির্দেশ দেন।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির ইস্যু তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে সমুদ্রের ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিপুল সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া, ৭২০ কিলোমিটার উপকূল এলাকা জুড়ে প্রায় ৩ কোটি লোক জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় মাছ, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদ রক্ষা করা এবং সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব এবং আমি আশা করি আপনারা সফলভাবে এই দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে একযোগে সকল নৌ-ঘাঁটি চালু করেন এবং প্রথম বানৌজা ঈশা খানকে জাতীয় পতাকা প্রদান করে নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রার স্বীকৃতি দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তার সরকার সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে পরিণত করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তিন বাহিনীর উন্নয়নে সরকার ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী কাজ শুরু করে।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করতে এই বাহিনীতে মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুইটি মিসাইল ফ্রিগেট, যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত একটি ফ্রিগেট, দুটি মিসাইল কর্ভেটশিপ এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত ৫টি পেট্রোল ক্রাফট নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় নৌবাহিনীর টহল ও নজরদারির সক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র: বাসস

Print Friendly, PDF & Email