• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আইন লঙ্ঘনকারী ২২ মন্ত্রী-এমপির তালিকা করেও পিছু হটলো নির্বাচন কমিশন

2 cityনিজস্ব প্রতিবেদকঃ পৌর নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২২ জন মন্ত্রী-এমপির একটি তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজও হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন, সতর্ক করে আর চিঠি নয়, এখন থেকে সরাসরি অ্যাকশন’। কিন্তু, সেই অ্যাকশন আর নেওয়া হচ্ছে না। আইন লঙ্ঘনকারীদের ব্যবস্থা নেওয়া থেকে ইসি পিছুটান দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ২২ মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং অফিসারদের চিঠি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু দুপুরের পর তাদের ওই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়া থেকে পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সিরাজগঞ্জ ও হবিগঞ্জের দুই জন সংসদ সদস্যকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া এই চিঠিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ইসির প্রেমপত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মূলত বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পরই ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসে ইসি।

বৃহস্পতিবার সিইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি লংঘনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

ইসি সূত্রে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আচরণবিধি লংঘনের ঢালাও অভিযোগে মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া থেকে সরে এসেছে।

যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, কারও চেহারা দেখে নয়, যে আচরণবিধি ভঙ্গ করছে তার বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা নিতে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দিয়েছি। সবদিক থেকে আমরা কঠোর থাকব।

সূত্র জানায়, নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘন ও নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগে ২৬ জন মন্ত্রী ও এমপির একটি তালিকা তৈরি করেছিল কমিশন সচিবালয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে কমিশন সরাসরি শোকজ করলে তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। কমিশন তাদেরকে সতর্ক করে ওই অভিযোগ নিষ্পত্তি করে দেয়। একজনের বিরুদ্ধে দু’বার আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ ওঠে। বাকি ২১ জনের বিরুদ্ধে একবার করে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ ওঠে।

যাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে সতর্ক করে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে দু’জন সংসদ সদস্যকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়। তারা হলেন : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবু জাহির। একই সঙ্গে সামনের দিনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লংঘন করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে সব জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির কর্মকর্তারা বলেন, বাকি মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তেমন কোনো সুযোগ থাকছে না। কারণ হিসেবে তারা বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারিত রয়েছে। ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণা বন্ধের বিধান রয়েছে। এ হিসাবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সারা দেশে প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০ মন্ত্রী-এমপিকে সতর্ক করে চিঠি দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি কমিশন। তারা বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার কমিশনাররা অফিস করবেন না। আগামী ২৭ ডিসেম্বর রোববার কমিশনাররা অফিস করলেও সোমবারই প্রচারণার সময় শেষ হচ্ছে। সুতরাং বাকিদের সতর্ক করা হলেও নির্বাচনী প্রচারের সময় শেষ হয়ে যাবে। তখন ওই চিঠির কার্যকারিতা থাকবে না।

Print Friendly, PDF & Email