এবার পৃথক বিভাগ, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও মেডিকেল কলেজ দাবি পুলিশের

Pulice-logoনিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও মেডিকেল কলেজ চেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া সদস্যদের বিমা-সুবিধার আওতায় আনা এবং পৃথক পুলিশ বিভাগের দাবিও জানানো হয়েছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ ৪০০ কোটি টাকা জোগান দিতে পারলে ব্যাংক স্থাপনে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয়। পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং বার্তা সংস্থা ইউএনবির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য অন্য বাহিনীগুলোর সঙ্গে মিলে ‘কম্পোজিট ফোর্স’ (সমন্বিত বাহিনী) করা হবে বলে কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পুলিশ সুপার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক স্বাগত বক্তব্য দিয়ে সভা শুরু করেন। বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক খান। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইকবাল বাহার, ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান ও নরসিংদীর এসপি আমেনা বেগম। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে সমাপনী বক্তব্য দেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোখলেসুর রহমান।
ইকবাল বাহার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে (এপিবিএন) দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কম্পোজিট ইউনিটে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পুলিশের কী কী সমস্যা হতে পারে, তা তিনি বর্ণনা করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে যে কম্পোজিট ফোর্সের কথা বলা হচ্ছে, তাতে পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, সিভিল এভিয়েশনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থাকে যুক্ত করার কথা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, এপিবিএনকে তো বিমানবন্দরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলই। কিন্তু নিরাপত্তা যতটা উন্নত হওয়ার কথা ততটা হয়নি; বরং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। নিরাপত্তা মানে শুধু মালামাল জব্দ করা নয়। এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত যদি পারতেন, তাহলে এত দিনে তো নিরাপত্তা অনেক উন্নত মানের হয়ে যেত। আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো না। সে কারণে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
বিমানবন্দরে কার্যকর ও দৃশ্যমান নিরাপত্তা বাড়াতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যেও ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এই শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকায় এখনো বিমান পাঠাতে পারছি না। একটাই কারণে। এখনো কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এ গ্রেডে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এখনই বাড়াতে হবে। এই নিরাপত্তা বৃদ্ধি দৃশ্যমান হতে হবে। সেটা যদি না হয়, তাহলে আমাদের বিমান কিন্তু লন্ডনে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে যদি নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করতে চাই, অবশ্যই একটা “কম্পোজিট ইউনিট” (সমন্বিত ইউনিট) আমাদের করতেই হবে।’
কম্পোজিট ফোর্স গঠনের গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কে কার ওপরে, কে কার নিচে—এই প্রশ্নটা তোলা অবান্তর। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে হীনম্মন্যতায় ভোগার কিছু নেই। এখানে কাজ করতে হবে সবাইকে মিলেমিশে। বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশের ব্যাংক স্থাপনের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু ব্যাংক করতে তো ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। আপনারা সেটা দিতে পারলে প্রয়োজনে আমি অর্থমন্ত্রীকে বলব। বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বিভাগ ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁদের দাবি লিখিত প্রস্তাব আকারে দিতে বলেছেন।
বিমা চালু করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু পুলিশকে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। এটা ভালো প্রস্তাব। করা যেতে পারে।
পুলিশ বিভাগের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি অনেক বেশি। সরকারের পরিকল্পনা আছে সেখানে আরও কয়েকজন সচিব নিয়োগ দেওয়ার, যাতে ভালোভাবে কাজ চালানো যায়।
পুলিশের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। এমনকি কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি হলেও তাঁকে ছাড় দেওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী জেলার এসপিদের ভূমি দখলকারী, বিশেষ করে গরিবের সামান্য সম্পত্তিও ছিনতাইকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং দেশব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া মাদকের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে। এ জন্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করে বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজারি কমিটি’র সক্রিয়তার বিষয় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছি। তিনি এসব পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।’

Print Friendly, PDF & Email