পর্দা উঠছে আজ প্রাণের একুশের গ্রন্থমেলার

02নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা উঠছে আজ। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে  মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। গত বছর মেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবারের মেলা ঘিরে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সিটিটিভি ক্যামেরার চোখ থাকবে মেলা ও আশেপাশের এলাকায়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক যে কেউ চাইলে এমন কী ব্যক্তিবিশেষকেও বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হবে। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর ইমিরেটাস আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া সম্মানিত বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বৃটিশ কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির সভাপতি রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন, সাধারণ সম্পাদক জোসেফ ফেলিক্স বুরঘিনো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুল সংগীত পরিবেশন করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী।
এদিকে মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে গতকাল বিকালে মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, মেলা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। ব্যক্তিবিশেষ চাইলে বাড়তি নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এবারের বইমেলায় লেখক ও প্রকাশকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হবে। এদিকে, বইমেলা পরিদর্শনকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, এবারের পুরো বইমেলাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে। গত বছরে বইমেলার মূল ভেন্যুতে দুর্ঘটনা ঘটেনি। বাইরে ঘটেছে। তাই এবার শুধু বইমেলার বাইরে শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত পর্যন্ত নিরাপত্তার চাদরে বইমেলাকে ঢেকে দেয়া হবে।
আইজিপি দাবি করে বলেন, অভিজিৎ হত্যা ছাড়া সবক্ষেত্রেই পুলিশ সফলতা পেয়েছে। আমরা সকলক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছি। প্রত্যেকটি ঘটনার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা জবানবন্দিও দিয়েছে। মাত্র একটি ঘটনা (অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড) ছাড়া। ওই হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অনেককেই চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। তবে তাদের লোকেট করতে পারেনি। তারপরও আমরা হতাশ হয়নি। আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আরও জানান, বইমেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তল্লাশি ছাড়া কাউকে  মেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছিল এমন প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি। এই বইমেলাতে লেখক-প্রকাশক কতটা নিরাপত্তা পাবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা পূর্ণ নিরাপত্তা পাবেন। শতভাগ নিরাপত্তা বলতে পৃথিবীতে কিছু  নেই। হোয়াইট হাউসেও হামলা হতে পারে। আমরা আমাদের ব্যবস্থায় তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেব। এসময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি’র মিডিয়া  সেন্টারে আসন্ন অমর একুশে বইমেলার নিরাপত্তার সার্বিক দিক তুলে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বইমেলা বাংলা একাডেমি  ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই স্পটে এবার কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। আমরা জানি, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তারা যেন বইমেলায়  কোনোরকম নাশকতা করে বইমেলার সুন্দর পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে না পারে এ ব্যাপারে তাদের বিষয়ে পুলিশ সতর্ক আছে। তিনি আরও বলেন, বইমেলার স্পটে যেখানে লেখক ও প্রকাশকদের আড্ডাস্থল থাকবে সেখানে পুলিশ তাদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে অনেক লেখক ও বুদ্ধিজীবীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হুমকিদাতাদের অনেককেই চিহ্নিত করা গেছে। আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে। আর যাদের হুমকি দেয়া হয়েছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, বইমেলা উপলক্ষে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত সকল প্রকারের যানবাহন বন্ধ থাকবে। দোয়েল চত্বর ও টিএসসিতে আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করা হবে। মেলায় আসা আগত দর্শনার্থীদের লাইন ধরে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়াও মেলা ঘিরে প্রায় ২০০ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো মেলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৯ ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। ইভটিজিং রোধে সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। মেলায় বিদেশি স্টল ও নাগরিকদের জন্যও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email