স্বৈরাচারের পতন হলেও ‘স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বহাল’

0001নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে এরশাদ সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে যে নতুন দিনের সূচনা হবে বলে আশা করা হয়েছিল তা সম্ভব হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একজন স্বৈরাচারীর পতন হলো কিন্তু স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পতন হলো না।’

তার মতে, ‘একজন অপসারিত স্বৈরশাসক হয়েও জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। তিনি যে গুরুত্ব পাচ্ছেন তাতে এটাই প্রমাণ হয় বাংলাদেশে যে ব্যবস্থার মধ্যে আমরা আছি, যে গণতন্ত্রের চর্চা চলছে তা কোনো গণতন্ত্রই নয়। এই গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।’

গণ আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর অবসান ঘটেছিলে বাংলাদেশের সেনাশাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদের সরকারের। তার পতনের ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। তবে শেষ সময় পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে গেছেন জেনারেল এরশাদ।
তার পতনের জন্য যে আন্দোলন এবং তার চাপে এরশাদের পতনের মাধ্যমে নতুন দিনের সূচনা হবে বলে আশা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বলে মনে করা হয় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এইচ এম এরশাদের এবং তার দলের পুনর্বাসন হয়েছে।

তাহলে ২৫ বছর পরে এসে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কোথায় দাঁড়িয়েছে?
চৌধুরী বলেন, স্বৈরশাসক হয়েও জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন তার একটি বড় কারণ হলো তার অনেক অর্থ আছে। তাছাড়া তিনি স্থানীয়ভাবে সমর্থন পাচ্ছেন।

কিন্তু অন্যতম কারণ হলো তার যেহেতু কিছু ভোট আছে তাই বাংলাদেশের বড় যে দুটি দল আছে তারা দু পক্ষই ভোটের জন্য তাকে নিজেদের দিকে টানতে চায়।

যে ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে তাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জনপ্রতিনিধিদের শাসন এবং সর্বোপরি নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি বলে মনে করেন অধ্যাপক চৌধুরী।

তিনি বলেন, তার দায়ভার নিতে হবে বাংলাদেশের বড় দুই দলকেই। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাকে এরশাদ যে গুরুত্ব পাচ্ছেন তা তার পাওয়ার কোনো কারণই নেই।

তার মতে, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য আবারো বাংলাদেশকে জনগণের মতের কাছেই যেতে হবে কিন্তু বাংলাদেশ জনমত তৈরির কোনো পথ পাচ্ছে না। সেটা ভোটের মাধ্যমে হচ্ছে না, গণমাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে না। মানুষের মতের কোনো দাম বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে ধরা পড়ছে না। তবে বাংলাদেশের মানুষ সচেতন। তারা ডাক দিলে শোনে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন সেই ডাক দেবার মানুষ নেই।’

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email