স্বজন হারাদের বক্তব্যে অঝোরে কাঁদলেন মির্জা ফখরুল, বললেন দেশে মানবাধিকার ভূলুন্ঠিত

00001নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবাধিকার প্রশ্নে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দ্বিমুখী নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তব্যের শুরুতেই আবেগে আপ্লুত হন তিনি। এসময় তার কণ্ঠ ভারি হয়ে ওঠে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব নেতাকর্মী গুম হয়ে আছে বলা হচ্ছে তাদের স্বজনদের সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এভাবেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

সভার শুরুতে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজন হারানোর ব্যথার কথা তুলে ধরেন। এসময় গুম হওয়া তিন নেতার শিশু সন্তানেরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার আকুল আবেদন জানায়।

এছাড়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা সন্তানকে খুঁজে না পাওয়ার অনুভূতির কথা তুলে ধরেন। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের কথা শুনে অবশ্য তখন আসনে অবস্থানরত মির্জা ফখরুলকে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, দুনিয়াজুড়েই মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। মানবাধিকার নিয়ে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড চলছে। একদিকে মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। যারা লঙ্ঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে’ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার ভূলুন্ঠিত। এমনকি পৃথিবীতে মানবাধিকার ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। আরব দেশগুলোতে বিমান থেকে বোমা মেরে লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।’
‘অন্যদিকে জঙ্গিরা বোমা হামলা করে সাধারণ মানুষকে গৃহহারা করছে। বাঁচার আশায় মানুষ নৌকায় করে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছে। এতে শতশত মানুষ বিভিন্নভাবে নিহত হচ্ছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘কি দেশ আমরা স্বাধীন করলাম। যে দেশে আমার সন্তানেরা তার পিতাকে খুঁজে পাবে না। দ্বারে দ্বারে ঘুরবে কিন্তু কোথাও সহায়তা পাবে না।’
তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রে শান্তি ফিরে পাওয়া খুব কঠিন। মানুষের অশ্রুর অনেক মূল্য। কিন্তু আজকে জাতিকে তাই দিতে হচ্ছে।

‘সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী গুম, অনেকেই পঙ্গু। পুলিশ ধরে নিয়ে তাদের পঙ্গু বানিয়েছে। ক্রসফায়ারে যে কত মানুষ নিহত হয়েছে ইতোমধ্যে তা প্রকাশিত হয়েছে। সরকার একদিকে মানবাধিকারের কথা বলছে, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

ফখরুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে তাদের মানবাধিকার, ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য আন্দোলন করতে হবে। বিজয় আমাদের হবেই ইনশাআল্লাহ।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সবকিছুই আছে আবার কোনো কিছুই নেই। বিচার বিভাগ আছে। কিন্তু স্বাধীনতা কতটুকু আছে, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাই। মানবাধিকার ফিরে পেতে চাই। এটার জন্যই আমাদের সংগ্রাম। ছোট শিশুরা বড় হওয়ার আগেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম করতে হবে।’
মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার ভুল পথে হাঁটছে। পুলিশ দিয়ে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ দমন করা যাবে না। জঙ্গিবাদ দমন করতে হলে সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে তা মোকাবিলা করা।
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে মসজিদ, মন্দির, ইমাম এমনকি পুলিশের উপরেও হামলা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসাবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেশের মানবাধিকার কমিশন বলেছে শতকরা ৭৭ ভাগ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় পুলিশ দিয়ে। যারা আমাদের রক্ষা করে তাদের এ অবস্থা। এ অবস্থার অবসান চাইলে অশ্রু বিসর্জন না করে রাজপথে নামতে হবে।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান এবং ২০১৩ সাল থেকে গুম হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের স্বজনরা।

Print Friendly, PDF & Email