২০ দলীয় জোট ছাড়ছে ইসলামী ঐক্যজোট, আজ সম্মেলনে ঘোষণা

10নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলন করছে ২০ দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট। আজ বেলা ১১টায় এ সম্মেলন হওয়ার কথা। জানা গেছে, সম্মেলনে বিএনপির কাউকে দাওয়াত করা হয়নি। শরিক দলগুলোর ইফতার ও জাতীয় সম্মেলনসহ বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে সাধারণত বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অতিথি হিসেবে থাকেন। অথচ আজকের্ এই অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াতই করা হয়নি। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ সম্মেলন থেকে তারা বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারে। এ ঘোষণা প্রায় চূড়ান্ত। নিজেদের মধ্যে দুদিন ব্যাপী উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে গতকাল বুধবার রাতে ইসলামী ঐক্যজোট নেতারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করে বলছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর উপস্থিতি দেখা যায়নি। অনেক দিন পর রাজধানীতে বিএনপির বড় ধরনের এ কর্মসূচিতে শরিকদের কারও না থাকা নিয়ে গুঞ্জন উঠছে।

সমাবেশের পর কেউ কেউ এমন কথাও বলেছেন যে, জোটের অন্যতম দুই শরিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট থেকে আপাতত দূরত্ব বজায় রাখতে ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি এককভাবে করার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এ কারণে শরিকদের অন্য কাউকেও সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময়ের রাজনৈতিক সম্পর্ক ইসলামী ঐক্যজোটের। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেক দিনের চাপা ক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫ জানুয়ারির সমাবেশে দাওয়াত না দেয়া। তা থেকেই দলটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের ক্রমাগত চাপ ও সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতিও। আজ বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দলের ত্রি-বার্ষিক কনভেনশন। এ কনভেনশনে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়া হবে। বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় শেষ হওয়া মজলিসে শূরার জরুরি-রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে মজলিসে শূরার ২৭ জন সদস্যই একমত। যেহেতু বিএনপিও এখন আর জোট টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে এসে পরবর্তী সময়ে ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনৈতিক রোডম্যাপ কী হবে, এ নিয়ে বিতর্ক চলেছে বুধবার ও মঙ্গলবার।

রাজধানীর লালবাগের জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা ভবনে রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকটি চলে।

আজকের অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দেবেন চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী। তার উপরেই দায়িত্ব পড়েছে ঘোষণা দেওয়ার। আর মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ঘোষণা দেওয়ার লিখিত বক্তব্য তৈরি করবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্য জোট মিলিত হয়ে চার-দলীয় ঐক্য জোট গঠন করে। পরবর্তী সময়ে আরও দল যুক্ত হয়ে বর্তমানে ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে ভাঙনের মুখে পড়ে ইসলামী ঐক্যজোট। যদিও ওই বছরের নির্বাচনে মুফতি আমিনী ও মুফতি শহিদুল ইসলাম দলটির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথম চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের সঙ্গে মনোমালিন্যে জড়িয়ে পড়ে। এতে জোট ভেঙে পৃথক ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনী। আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ‘ইসলামী ঐক্যজোটের’ কোনও কার্যক্রম চালায়নি।

অন্যদিকে, চারটি দল নিয়ে মুফতি আমিনীর অংশটিই ‘দল হিসেবে’ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। পাশাপাশি মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্ব বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট নামে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। অন্য গ্রুপটি পলাতক মুফতি ইজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে আছে। এটির কোনও কার্যক্রম নেই।

Print Friendly, PDF & Email