• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

এত বেতন বাড়ানোর পর অসন্তোষ কেন, চাকরি ছেড়ে সচিব হনঃ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রী

0-1নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সকলের বেতন-ভাতা ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। এরপরও দেখি কেউ কেউ অসন্তোষ। কেন অসন্তোষ এটা আমার কাছে বোধগম্য না।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের মর্যাদা সবার উপরে। এত বেতন-ভাতা বাড়নোর পরও যদি আপনাদের কোনো অসুবিধা হয়, সেটা তো আমরা দেখব, আমরা দেখছি। আন্দোলন করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট করবেন না। ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা যদি বন্ধ করেন, ছাত্রছাত্রীরাও তা মেনে নেবে না।’

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠুভাবে চলুক, আমরা তা চাই। এজন্য সরকারে আসার পর থেকে যানজটমুক্ত রাস্তাঘাট তেমনি সেশনজটমুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। কাজেই সে শিক্ষা যাতে সুষ্ঠুভাবে চলে, আমরা সেটাই চাই। সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের সম্মান অনেক উপরে। এখন একটা শিক্ষক যদি সচিবের মর্যাদা চায়, আমার কিছু বলার নাই। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে ওই সম্মান আদায় করার কথা বলা— এটা একজন শিক্ষককে মানায় না। এটা একজন শিক্ষকের জন্য মোটেও সম্মানজনক না। কারণ, শিক্ষকদের সন্মান সবার উপরে। আমার শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান সাহেব, আমার শিক্ষক রফিক স্যার, তারা তো আমার শিক্ষক, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও আমার শিক্ষক হিসেবে আমি তাদের সম্মান করি। কাজেই সম্মানবোধটা কিছুটা নিজেদের ওপরও নির্ভর করে।’

শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সমস্যাটা কী, সেটা তো আমরা আলোচনা করছি। যার যার কর্মক্ষেত্র তার তার। আর যদি সচিবের মর্যাদাই লাগে, চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেরা সচিব হয়ে যান বা পিএসসিতে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন। তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেটে যখন খাবারের টান থাকে, তখন পেটের খাবারের কথা চিন্তা থাকে। সেই পেটের খাবারের চিন্তা আমরা দূর করে দিয়েছি বলে এখন প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি— এটাই বাঙালির স্বভাব। কোনো কিছুতেই বোধ হয় সুখী করা যায় না, এটাই বোধ হয় আমাদের দুর্ভাগ্য। যতই দেই, কিছু কিছু লোক কেন জানি সুখী হয় না। কেন হয় না, সেটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তার বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘সারা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতাতেই ঢাকায় মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেট্রোরেলের একটি স্টেশন রেখেছে। এ নিয়ে আন্দোলন অযৌক্তিক। উত্তরা থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। এর ১৬টি স্টেশন। আমরা ইচ্ছে করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্টেশন রেখেছি। উত্তরা, মিরপুর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ে এসে ক্লাস করে আবার ফিরে যেতে পারবে। আধুনিক পদ্ধতিতে হবে এটা। আকাশপথে যাবে। এর জন্য যেখানে যেখানে সাউন্ড প্রুফ করা দরকার তাই করা হবে। কিন্তু আমি দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র-শিক্ষক এই মেট্রোরেলের স্টেশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়েছে। তাদের প্রশ্ন, মেট্রোরেল এখান দিয়ে যাবে কেন?’

প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘‘গ্রামে একটি কথা আছে, ‘যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।’ যাদের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল করলাম… এখানে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বারডেম, বাংলা একাডেমি; এখানকার সবাই নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। অল্প সময়ে যানজটমুক্ত চলাচল করার জন্যই এই সুযোগ সৃষ্টি করা। সেখানে কেন আন্দোলন?”

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ফুলবাড়ীতে রেল স্টেশন ছিল। এখন যেটা রেলভবন সেখানেই ছিল রেল স্টেশন। রেলগাড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পলাশী, হাতিরপুল হয়ে যাতায়াত করত। রেল স্টেশনের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল যাতে ছাত্র-শিক্ষকরা সহজে যাতায়াত করতে পারেন।’

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে রেললাইন আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে রেললাইন আছে। রেললাইন পৃথিবীর কোথায় নেই। হঠাৎ এটা নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কী আছে, আমি তো বুঝতে পারি না। আজ যানজটে আটকা পড়ে থাকবে, নাকি মেট্রোরেলে সাঁই সাঁই করে আসবে, ক্লাস করে বাড়ি ফিরে যাবে। অবশ্য বাংলাদেশে একশ্রেণির লোক আছে, যাই করতে যাই, একটা ‘কিন্তু’ বের করে আন্দোলন শুরু করে দেয়।’’

‘বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যোগসূত্র ছিল’ দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্ত আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। সেই সরকার কেন একটি বাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটাবে। এটা কোনো সরকার করতে পারে না। খালেদা জিয়ার কাছে আমার প্রশ্ন-বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সকাল ৯টায়, তখন খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে থাকতেন। সেই বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে ৭টা-৮টার মধ্যেই তিনি বের হয়ে চলে গেলেন আন্ডারগ্রাউন্ডে। তিনি কেন আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলেন এই জবাব তাকে জনগণের কাছে দিতে হবে। এই বক্তব্য থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, এই ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র ছিল এবং তার ছেলে তারেক রহমান লন্ডন সময় রাত ১টায় ৪৫ বার ফোন করেছে বাংলাদেশে। তার মাকে ওই বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে বলেছে। কেন তার ছেলে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলল, এই বলার রহস্য কী? তাহলে তার এই ঘটনার সঙ্গে অবশ্যই যোগসূত্র ছিল।’

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময়ে ১৯টি ক্যু হয়েছে। সে সময়ে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। উচ্চ আদালত সেই বিষয়ে রায় দিয়েছেন। ফলে উচ্চ আদালতের রায় মানলে জিয়াউর রহমানকে এখন আর রাষ্ট্রপতি হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে না। কেউ বললে সেটা উচ্চ আদালত অবমাননার শামিল হবে। একই সঙ্গে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে যে দল গঠন করেছেন, সেই দলকে অবৈধ বলে গণ্য করা উচিত। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ করে দেন। আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। ২০০৯ সালে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার পর অনেক মহল এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিন্তু কোনো মহলের ষড়যন্ত্রই সেই বিচারকাজ বন্ধ করতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মেয়র আনিসুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email