• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

প্রধান বিচারপতির কথা বলার একটা সীমা থাকা উচিত, তিনি একটু বেশি কথা বলেন: সুরঞ্জিত

Suronjit-2নিজস্ব প্রতিবেদক: অবসরে যাওয়ার পরেও রায় লেখা নিয়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ দাবি করে তার কড়া সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।

তিনি বলেছেন, ‘সাংবিধানিকভাবে প্রধান বিচারপতি দেশের প্রধান তিনজনের একজন। প্রধান বিচারপতি প্রধান বিচার করেন, প্রধান কথা বলেন না। কিন্তু, এই বিচারপতি কথা একটু বেশি বলেন।’

সোমবার দুপুরে শিল্পকলা একাডেমিতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ স্মরণে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের শোকসভায় সুরঞ্জিত এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থি।’ তার এ বক্তব্যে সরকারি এবং বিরোধী শিবিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে।

সুরঞ্জিত বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদে থেকে তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা জাতীয় রাজনীতিতে উৎকণ্ঠা এবং বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে কথা বলতে বলতে তিনি কেথায় চলে যাচ্ছেন, তারও একটা সীমা থাকা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি এমন কিছু কথা বলেছেন যা সংবিধানের কোথাও নেই। সংবিধান রচনা করেছি আমরা। সংবিধানের কোন জায়গায় লেখা আছে বিচারপতিরা অবসরে গেলে রায় লেখা যাবে না? একথা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই।’

আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘নিজস্ব কোন্দলের জন্য জাতীয়ভাবে এতবড় একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন, এটা আমরা আশা করি না। আপনার (প্রধান বিচারপতি) এ কথা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সংযত হয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের প্রতি এমনিতেই আমরা সম্মান একটু বেশি দেখাই। তাদের কথাবার্তায় সাবধানতা থাকা উচিত। তাহলে সম্মান বোধটা কমবে না। উনি যা বলেছেন এটা তো কোনো আইন নয়। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু হলে এটা বাতিল করতে পারে হাইকোর্ট। বিচার বিভাগকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’

প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘এটা কোনো রাষ্ট্রীয় সহনশীলতার কথা নয়। এই সমস্ত পদে এগুলো কি? দুই বিচারপতির মধ্যে গোলমাল, আক্রোশ-বিক্রোশ করেন এটা বাইরে আসবে কেন? আমি এবং তুমি এটা জনগণ জানবে কেন?’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- আর আপনি সেটা নিয়ে পাবলিকলি কথা বলেন। অনেককে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে আমরা খুবই মর্মাহত। আপনি কথাবার্তা আরো সংযত হয়ে বলুন। এমন কোনো কথা বলবেন না যা জাতীয় জীবনে রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। সংঘাত পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর রাগ, অভিমান, বিদ্বেষ সব ভুলে গিয়ে দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করে যাওয়ার কথা। আর আপনি বলে উঠলেন আপনার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আইনের শাসনের যুগ এখন, আপনরা তো স্বাধীন এবং আলাদা। সংবিধানে স্পষ্ট লেখা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি এই তিনটি অঙ্গনই একে অপরের পরিপূরক।’

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পর বিএনপি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফাচ্ছে মন্তব্য করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘বিএনপি বলছে- আওয়ামী লীগে নাকি ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগে ভূমিকম্প হওয়া এত সহজ নয়। পেয়ে গেছি, পেয়ে গেছি বলে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফানো শুরু করেছে তারা।’

স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email