প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাকিলের মৃতদেহ উদ্ধার

indexপ্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের মরদেহ গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। এ ব্যাপারে জানতে রেস্তোরাঁর সাত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।মাহবুবুল হক শাকিলের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিকদের বলেন, গুলশান-২-এর সামদাদো জাপানিজ কুইজিন নামের রেস্তোরাঁয় প্রায়ই যেতেন মাহবুবুল হক শাকিল। গত সোমবার রাত আটটার দিকে তিনজন বন্ধুর সঙ্গে তিনি ওই রেস্তোরাঁয় যান এবং একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। তবে ওই দুই বন্ধু রাত ১০টার দিকে বেরিয়ে যান। রেস্তোরাঁর একটি কক্ষে থেকে যান শাকিল। রাতে তিনি সেখানেই ছিলেন। পরে গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে রেস্তোরাঁর কয়েক জন কর্মী তাঁকে ডাকতে থাকেন। তবে ওই কক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় দরজা খুলে দেখতে পান, মেঝেতে শাকিলের নিথর দেহ পড়ে আছে। এরপর রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক হেলালকে খবর দেন। হেলাল শাকিলের পরিবারকে খবর দেন। শাকিলের পরিবার ও পুলিশ বেলা আড়াইটার দিকে রেস্তোরাঁয় এসে পৌঁছায়। এরপর সেখানে একজন চিকিৎসক এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে ঠিক কখন তিনি মারা গেছেন, তা কেউই নিশ্চিত করতে পারেননি। রেস্তোরাঁর সামনে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘সম্ভবত শাকিল স্ট্রোক করে মারা গেছেন।’
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সামদাদো রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকসহ সাতজনকে আটক করে নিয়ে গেছে গুলশান থানা-পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাঁদের আটক করেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থল পুলিশ ঘিরে রেখেছে। তবে ঠিক কী কারণে এবং কেন শাকিল মারা গেলেন, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। ময়নাতদন্তের পরই তা জানা যাবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিকেলের দিকে ওই রেস্তোরাঁর সামনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুবুল হক শাকিলের মরদেহ রাজধানীর বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। আজ বুধবার সকালে তাঁর ময়নাতদন্ত করা হবে। পরে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা হবে। সেখান থেকে মরদেহ তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারায় নেওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
শাকিলের মৃত্যুর খবর শুনে কুইজিন রেস্তোরাঁয় যান ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সেল সিআরআইয়ের পরিচালনার দায়িত্ব পান ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হক শাকিল। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিবের দায়িত্ব পান তিনি। চার বছর পর তাঁকে বিশেষ সহকারী (গণমাধ্যম) করা হয়। এরপর ২০১৪ সাল থেকে অতিরিক্ত সচিব মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহ হলেও শাকিলের জন্ম ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে। তাঁর বাবা জহিরুল হক ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মা নূরুন্নাহার খান শিক্ষিকা। শাকিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ও আনন্দ মোহন কলেজে পড়েছেন; স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। সাবেক এই ছাত্রনেতা নিয়মিত কবিতাও লিখতেন। খেরোখাতার পাতা থেকে ও মন খারাপের গাড়ি নামে তাঁর দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email