আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ভঙ্গ করে চিলির কোপা শিরোপা বিজয়

কোপার শিরোপা জয়ের উল্লাস চিলির

কোপার শিরোপা জয়ের উল্লাস চিলির

ঢাকা: ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬। টানা তিন বছর ফাইনালে খেলার কীর্তি গড়েছে আর্জেন্টিনা। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তিনটিতেই তারা হারের মুখ দেখেছে। ফাইনাল কি তাহলে তাদের জন্য অভিশাপ? গোটা টুর্নামেন্টে ছান্দিক ফুটবল খেলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে কেন যেন খেই হারিয়ে ফেলেন লিওনেল মেসিরা। যা একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের বেদনা হয়ে দাঁগ কাটছে আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে। তীরে এসে তরি ডুবালে আফসোসটা তো অনেকাংশে বেড়ে যায়, এটাই স্বাভাবিক।

যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আরেকবার খলনায়কের আসনে বসলেন মেসি! প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। এরপর টাইব্রেকারে যা করলেন, তা আর্জেন্টিনার দলীয় অধিনায়কের নামের পাশে সত্যিই বেমানান। এ পর্যায়ে প্রথম শট নিতে এসে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন। বল ভাসিয়ে দিলেন শূন্যে। আর্জেন্টিনার জয়ের স্বপ্নও যেন হাওয়ায় ভেসে গেল। ২৩ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানো তো দূরের কথা, বাড়ল আক্ষেপের সময়টাও।

সোমবার সকালে ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকা ফাইনালেরই পুনরাবৃত্তি হলো যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত শতবর্ষী কোপায়। টাইব্রেকারে সেই চিলির কাছে ৪-২ গোলে ব্যবধানে হেরে ফের শিরোপা বিসর্জন দিল আর্জেন্টিনা। আরেকবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে দেশের বিমান ধরার অপেক্ষায় মেসি শিবির।

অপরদিকে, কোপায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে চিলি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতেছে তারা। ফাইনালে চেনা প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একই ফল। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে টাইব্রেকারে নিয়ে গেছে ম্যাচটি। মেসি-হিগুয়েনদের হতাশ করে ট্রফি নিজেদের শোকেসে তুলেছেন অ্যালেক্সিস সানচেস-ভিদালরা।

এবারের ফাইনালে টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় প্রথমত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে চিলিই। আরতুরো ভিদালের নেয়া শটই ঠেকিয়ে দিয়ে নায়ক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। অপরদিকে আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম শট নিতে আসেন মেসি। বল উড়িয়ে দিলেন ক্রসবারের উপর দিয়ে! দু’দল তখনও সমানে সমান (০-০)।

চিলির পক্ষে দ্বিতীয় শটে আর্জেন্টিনার জাল কাঁপান নিকোলাস কাস্তিও। আর্জেন্টিনার হয়ে এবার লক্ষ্যভেদ করলেন হাভিয়ের মাসচেরানো (১-১)। রেমেরোকে বুঝে ওঠার আগেই তৃতীয় শটে আরাগেনস সাবলীলভাবেই গোল আদায় করে নেন। সার্জিও আগুয়েরোও নিচু শটে ব্রাভোকে বোকা বানান (২-২)। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল।

আর্জেন্টিনার কপাল পুড়েছে চতুর্থ শটে। চিলির হয়ে বোশেজুর শট লক্ষ্যভেদ করেছে। তবে বিগলিয়ার শট ঠেকিয়ে দিয়ে নায়ক বনে যান চিলির গোলরক্ষক ব্রাভো (৩-২)। পঞ্চম শটে আর্জেন্টিনার জাল কাঁপিয়ে চিলির শিরোপা জয় নিশ্চিত করেন ফ্রান্সেসকো সিলভা (৪-২)। এরপর আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড়ের পঞ্চম শট নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি।

এর আগে কোপা শতবর্ষী প্রতিযোগিতার ফাইনালে আলোচিত ‘তারকা’র চরিত্র ছিল ব্রাজিলের রেফারি হেবার রবার্তো লোপেজ! প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটের মধ্যেই দুই দলের দুই খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখিয়ে বিদায় করেন। ২৮তম মিনিটে মেসিকে ফাউল করায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় মার্সেলো দিয়াসকে। প্রথম হলুদ কার্ডটি তিনি দেখেছিলেন ওই মেসিকে রুখতে গিয়েই। ৪৫তম মিনিটে আর্তুরো ভিদালকে ফাউলের জন্য আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার মার্কাস রোহোকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়তে বলেন ব্রাজিলিয়ান এই রেফারি।

প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিতে পারতেন গঞ্জালো হিগুয়েন। ২১তম মিনিটে চিলির গ্যারি মেডালের ভুলে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও চিলির গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভোকে পরাস্ত করতে পারেননি নাপোলির এই স্ট্রাইকার। আর্জেন্টিনার পক্ষে আরেকটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন হিগুয়েনের বদলি হিসেবে খেলতে মাঠে নামা সার্জিও আগুয়েরো। ৮৪তম মিনিটে লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির তারকা।

এদিকে, ম্যাচের অন্তিমলগ্নে একটি সম্মিলিত আক্রমণ থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে পারেননি চিলির প্রাণভোমরা আলেক্সিস সানচেজ। এই কয়েকটি সুযোগ ছাড়া কোপার শতবর্ষী আসরের ফাইনালটা গতবারের মতোই খুব একটা জমেনি! তাই ফল নির্ধারণ করতে হয়েছে টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষার দ্বারস্ত হয়ে।

Print Friendly, PDF & Email