• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আবরার হত্যার প্রতিবাদে কুড়িলে রাজপথ অবরোধ করে শিবিরের বিক্ষোভ


নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বুধবার সকালে রাজধানীর কুড়িল ভাটারায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র শিবির ।

প্রগতি সরণিতে বুধবার সকাল ৮টার দিকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা মহানগর উত্তরের ব্যানারে রাজপথ অবরোধ করে ওই বিক্ষোভ মিছিল হয়।

মিছিলটি কুড়িল বিশ্বরোডে গিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সভার পর শেষ হয়। এতে বক্তারা বলেন, দেশের সম্পদ রক্ষার কথা বলায় দেশসেরা শিক্ষার্থীকে যেভাবে পিটিয়ে মারল ছাত্রলীগ, তাতে বোঝা যায় দেশ এখন কাদের দখলে।

তারা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে খুনিদের বিচারের দাবি জানান। এ সময় রামপুরা-বিমানবন্দর সড়কে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়।

বক্তারা আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। ক্লাসে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। আবরার ফাহাদ ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া জেলা স্কুল বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

পরে এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন ঢাকা নটর ডেম কলেজে। সেখান থেকে ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন ‘এ’ প্লাসসহ উত্তীর্ণ হন।

পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। ফাহাদ সেখানে শেরেবাংলা হলের ১০১১নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১নং কক্ষে মদ পান করে ছাত্রলীগের হিংস্র হায়নারা ৬ ঘণ্টা ধরে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে দেশপ্রেমী এই মেধাবী ছাত্রকে।

এদিকে আবরার নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও আরও অজ্ঞাতনামাদেরও আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) বুয়েটের ইইই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

সে বুয়েটের শেরেবাংলা আবাসিক হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর রুমে থেকে লেখাপড়া করত। ওই ছাত্রাবাসের কিছু ছাত্র আবরারকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মারধর করে গুরুতর জখম করে হত্যা করে।

বুয়েটের শেরেবাংলা হল কর্তৃপক্ষ, বুয়েটের কিছু ছাত্রের সঙ্গে আলোচনা করে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে আবরার বাবা জানতে পারেন, ওই ছাত্রাবাসের ছাত্র মেহেদী হাসান রাসেল (বুয়েটের সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), মুহতাসিম ফুয়াদ (সিই বিভাগ, ১৪তম ব্যাচ), মো. অনিক সরকার, (সিই বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), মো. মেহেদী হাসান রবিন (সিই বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিকেল ইঞ্জি., ১৬তম ব্যাচ), মো. মনিরুজ্জামান মনির (পানিসম্পদ বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জি., ১৫তম ব্যাচ), মো. মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. মোজাহিদুল রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), খোন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (এমই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মো. আকাশ (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মো. শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জি., ১৭তম ব্যাচ), মো. শাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. তানীম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. মোর্শেদ (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. মোয়াজ (সিএসই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) ও মুনতাসির আল জেমিসহ (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বুয়েট ছাত্র ৬ অক্টোবর শিক্ষার্থী আবরারকে তার শেরেবাংলা হলের রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়।

পর দিন ৭ অক্টোবর রাত আড়াইটা পর্যন্ত ওই হলের রুম নম্বর ২০১১ ও ২০০৫-এর ভেতর নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্টাম্প ও লাঠিসোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করে।

এতে ঘটনাস্থলেই আবরার মারা যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে আবরারের মৃতদেহ ফেলে রাখে।

পরে কিছু ছাত্র আবরারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Print Friendly, PDF & Email