সড়কে মৃত্যুর মিছিল: একদিনেই সারাদেশে ঝরে গেল ২৬ প্রাণ

0-1নিউজ ডেস্ক: সড়কে থামছেনা অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে তালিকা। ধারাবাহিক মৃত্যুর মিছিলে মঙ্গলবারও যোগ হয়েছে আরো ২৬ নাম। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত  হয়েছেন ১০ জন। রাজশাহীতে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন আরো ৭ জন।

যশোরে বাস উল্টে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন। খুলনায় নিহত হয়েছেন আরো একজন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কংক্রিট মিক্সারের চাপায় নিহত হয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী পোশাক শ্রমিক। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে তেলবাহী ট্যাঙ্কলরি চাপায় নিহত হয়েছেন মাংস ব্যবসায়ী।

রংপুরে ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছেন  মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বাস চাপায় নিহত হয়েছেন ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ।

রাজশাহীতে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৭ জন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের দেওয়ানপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলায় তেলবাহী ট্যাংক লরির সঙ্গে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমনের সংঘর্ষে সাত স্বজনসহ ৮ জন নিহত ও অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। এর হলেন- আজাহার আলী, তার স্ত্রী বেলীয়ারা ও আবু বক্কর সিদ্দিক। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ট্রাভেলসের একটি বাস ঢাকা থেকে রাজশাহী শহরে ঢুকছিল। অন্যদিকে অর্পা পরিবহনের আরেকটি বাস রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুরে যাচ্ছিল। ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বাসটি একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গেলে দুই বাসে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়, আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও পাঁচজন মারা যান।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (পূর্ব) আবু জাফর সাতজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সিরাজগঞ্জে দুর্ঘটনায় সাত স্বজনসহ নিহত ৮: সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলায় তেলবাহী ট্যাংক লরির সঙ্গে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমনের সংঘর্ষে সাত স্বজনসহ ৮ জন নিহত ও অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার গাড়াদহে নগরবাড়ি-বগুড়া মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নসিমনের যাত্রী উপজেলার বড় মহারাজপুর গ্রামের অজুফা বেগম (৬০), মকবুল হোসেন (৪০), ফিরোজা খাতুন (৩০), অঞ্জনা (২৫), বন্যা খাতুন (১০), জালাল উদ্দিন (৪০), রেনু খাতুন (৩৫) ও নসিমন চালক সোবাহান মিয়া (৪০)।

শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, তেলবাহী লরিটি উত্তরবঙ্গ থেকে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে যাচ্ছিল। আর শাহজাদপুর থেকে একটি যাত্রীবাহী নসিমন উল্লাপাড়া যাচ্ছিল।

ঘন কুয়াশার মধ্যে লরিটি গাড়াদহে পৌঁছালে সামনের চাকা ফেটে যায়। এ সময় লরিচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নসিমনকে চাপা দিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই ঘটনাস্থলেই নিহত হন- নসিমনের যাত্রী অজুফা, অঞ্জনা, মকবুল হোসেন, বন্যা ও নসিমনের চালক সোবাহান (৩৫)। আহত হন ১৬ জন।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান- জালাল উদ্দিন, রেণু খাতুন ও ফিরোজা খাতুন।

আহত সাতজনকে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আর লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

নিহত ফিরোজা বেগমের স্বামী রেজাউল জানান, তার ভাইয়ের ছেলের খাতনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পরিবারের ২২ জন সদস্য ঢাকা যাওয়ার জন্য উল্লাপাড়া রেল স্টেশনে যাচ্ছিলেন।
পথে তেলবাহী লরির সঙ্গে তার স্বজনদের বহনকারী নসিমনের সংঘর্ষ হয়। এতে নসিমনটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে তার পরিবারের আট সদস্য নিহত হন।

নিহত রেণু খাতুনের স্বামী তারা মিয়া বলেন, নসিমনের চালক বাদে নিহত সাতজন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই-বোন। সবাই একসঙ্গে থাকতেন।

এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আহমেদ জানান, ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন, পুলিশ সুপার মিরাজউদ্দিন আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আহমেদ ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০,০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খরচ বহন করবে জেলা প্রশাসন।

Print Friendly, PDF & Email