গাজীপুর ও রংপুরে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যা

pitiye hottaনিজস্ব প্রতিবেদকঃ এবার গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর হিমারদিঘী এলাকায় ভাঙ্গারির দোকানে মোজাম্মেল হক মজু (১৪) নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে সালাম নামে এক ব্যক্তিকে হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো দুইজন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার নীলকচন্ডি পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত সালাম গাইবান্ধার স্যাদুল্লাপুর এলাকার বাসিন্দা। অন্যদের নাম ও ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

গঙ্গাচড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী জানান, সালাম, মশিউর রহমান ও মালেক নামে তিন ব্যক্তি ওই গ্রামে ঢুকে গরু চুরি করে নিয়ে যাবার সময় এলাকাবাসি তাদের আটক করে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনিতে তিনজন গুরুতর আহত হন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত ঘোষণা হয়। অপর দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশি পাহারায় তাদের চিকিৎসা চলছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

এবার টঙ্গীতে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যাঃ
সিলেটে রাজন, খুলনায় রাকিব এবং বরগুনায় শিশু রবিউলকে হত্যার পর এবার গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর হিমারদিঘী এলাকায় ভাঙ্গারির দোকানে মোজাম্মেল হক মজু (১৪) নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কিশোর মোজাম্মেল নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার উত্তর তারার চর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। সে তার বাবা-মার সঙ্গে টঙ্গীর তিস্তার গেট এলাকার হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। সোমবার ভোরে টঙ্গীর হিমারদিঘী এলাকার সুমনের ভাঙ্গারির দোকান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত মোজাম্মেলের বাবা জামাল উদ্দিন জানান, মোজাম্মেল তার একমাত্র সন্তান। বছর তিনেক যাবৎ গ্যাস্ট্রিক ও পেট ব্যাথার কারণে ভারী কোনো বস্তু তিনি উঠাতে পারেন না। সময় পেলে জুতা পালিশ করে এক মাসের ঘর ভাড়া অন্য মাসে পরিশোধ করেন। স্ত্রীকেও ভাঙ্গারির কাজ করতে হয়।

ছেলে মোজাম্মেল ছোটবেলা স্কুল থেকে নিজের নাম পরিচয় লিখতে শিখেছে। এরপর পড়াশুনায় কোনো মনোযোগ দিতে পারেনি। তাই মায়ের সঙ্গে সেও ভাঙ্গারির কাজে নেমে পড়ে।

জামাল উদ্দিন আরো বলেন, আমার ছেলে মোজাম্মেল টঙ্গীর হিমারদিঘী এলাকায় সুমনের ভাঙ্গারি দোকানে গত সাত মাস যাবত কাজ করছে। সারাদিন ভাঙ্গারি হিসেবে যা পেত তা সুমনের দোকানে জমা করলে কোনোদিন ১শ` কোনোদিন ২শ` টাকা পেত। আবার কোনো দিন ভাঙ্গারি কিছু জমা করতে না পারলে ওই দিন খালি হাতেই বাসায় ফিরত।

গত তিন চারদিন যাবত ছেলেটি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে সে দুই দিন সুমনের দোকানে যায়নি। সোমবার সকালে ভাঙ্গারি দোকান মালিক সুমন ও তার ম্যানেজার সুমন চিশতী আমার বাসা থেকে ছেলেকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। সোমবার রাতে ছেলে আর বাসায় ফিরেনি। ওই রাতেই সুমন তার দোকানে শিকল দিয়ে বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে ছেলেকে হত্যা করে। পরে তার দোকানেই মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা করে।

মঙ্গলবার দুপুরে টঙ্গী থানার পুলিশ এসে আমাকে আমার ছেলের মৃত্যুর কথা জানায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নেয়ার সময় ছেলেকে দেখতে পায়। আমার ছেলে ও স্ত্রীর ভাঙ্গারির টাকায় বাজার, ঘরভাড়া আর সংসার চালাতাম। আমি এখন সন্তান হারা, সবহারা। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

টঙ্গী মডেল থানার এসআই আবুল খায়ের মঙ্গলবার ভোরে ওই দোকান থেকে মজুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এ ব্যাপারে টঙ্গী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বাদীর অভিযোগ পেলে মামলা নেয়া হবে। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে জানা যাবে।

Print Friendly, PDF & Email