ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় টাইগারদের

স্পোর্টস ডেস্ক: গত কয়েকদিন নিয়মিত বৃষ্টি হলেও টন্টনের সোমবারের সূর্যটা বেশ আলো ছড়িয়েছে। মাঝে কিছুক্ষণ মেঘমালা আকাশ ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করলেও সূর্যের কাছে পেরে ওঠেনি। সেই আলো বাংলাদেশ দলকেও আলোকিত করে রাখলো। ৪ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাশরাফিদের মনে যে হতাশা গ্রাস করেছিল, সেটা কিছুটা হলেও কমেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। টন্টনের ঝকঝকে আকাশের মতো মাশরাফিদের মুখটাও ঝলমল করছে। বিশ্বকাপ নিয়ে নতুন স্বপ্ন তাই দেখাই যায়!

নটিংহামে যাওয়ার আগে একটি জয় খুব প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পয়েন্ট ভাগাভাগি- সব মিলিয়ে কিছুটা হতাশ ছিল মাশরাফিরা। সেই হতাশা কাটিয়ে টন্টনের সমারসেট কাউন্টি গ্রাউন্ডে শেষ হাসি হেসেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের শর্ট বল সীমানা ছাড়া করতেই বাংলাদেশ তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পায়। বিশ্বকাপ তো বটেই, এর আগে এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল না মাশরাফিদের।

সমারসেটের কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ম্যাচ শেষ হতেই প্রবাসী বাংলাদেশি সমর্থকদের মুখে স্বস্তির হাসি। ৩২২ রানের লক্ষ্যে ৪১.৩ ওভারে ৭ উইকেট হাতে রেখে প্রভাব বিস্তার করা এমন জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কমই এসেছে। হাসিমুখ নিয়েই টন্টন থেকে মঙ্গলবার নন্টিংহামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার সুযোগ পাচ্ছে টাইগাররা।

টন্টনের এই স্টেডিয়াম আকারে খুব একটা বড় নয়। এমন ছোট মাঠে নামার আগে টিম কম্বিনেশন নিয়ে আগের দিন থেকেই চিন্তায় ছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত আগের একাদশ থেকে খুব বেশি পরিবর্তন আনেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। আগের বোলিং আক্রমণ রেখেই মোহাম্মদ মিঠুনকে বসিয়ে সুযোগ দেওয়া হয় লিটন দাসকে। স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান ওঠার পর লিটনের অন্তর্ভুক্তি যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। ফর্মে থাকা লিটন আরেক দফা সুযোগ পেয়ে নিজের কাজটা ঠিকভাবে করলেন। তার খেলা হার না মানা ৯৪ রানের ইনিংস বড় ভূমিকা রেখেছে।

শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের এক ওভারে তিনটি ওভার বাউন্ডারি মারেন লিটন। তার প্রতিটি শট গ্যালারিতে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে। সমারসেটের গ্যালারি যেন তখন এক টুকরো বাংলাদেশ। ‘সাকিব, সাকিব’ স্লোগানে মুখরিত গোটা স্টেডিয়াম। হবেই বা না কেন! জয়ের নায়ক তো সাকিবই। ৫২ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙার পর তামিম ইকবালকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন। তামিম ফিরে যাওয়ার পর মুশফিকও দ্রুত ফিরে যান, তবে চতুর্থ উইকেটে লিটনকে সঙ্গে নিয়ে রেকর্ড ১৮৯ রানের জুটি গড়ে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের জয়।

টস জিতে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ছোটখাটো সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মূলত বাতাস ও সবুজ উইকেট থাকায় বোলিংয়ের সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন মাশরাফি। সিদ্ধান্তটা যে সঠিক, সেটা শুরুতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। ৬ রানে ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলকে ফিরিয়ে শুরুটা দারুণ হলেও শাই হোপ ও এভিন লুইসের ১১৬ রানের জুটি দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের সমর্থকদের। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন ও সাকিবের বোলিংয়ে ৩২১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ক্যারিবিয়ানরা। এই মাঠ অনুযায়ী এই স্কোর খুব একটা কঠিন ছিল না। বাংলাদেশ ৫১ বল হাতে রেখে বুঝিয়ে দিয়েছে সত্যিই টন্টনের মাঠে এই স্কোর বেশি নয়!

বাংলাদেশের ম্যাচ ঘিরে টন্টনে আনন্দে মেতেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ম্যাচ দেখতে টন্টনের আশপাশে থেকে প্রচুর বাংলাদেশি সমর্থক এসেছেন। এখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা কম হলেও ব্রিস্টল, কার্ডিফ, লন্ডন, বার্মিংহাম কিংবা ম্যানচেস্টারে প্রচুর বাঙালি বাস করে। আশপাশের শহরগুলো থেকে টন্টনে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জানাতে তারা এসেছেন। স্টেডিয়ামে প্রায় পুরোটাই ছিল বাংলাদেশি সমর্থকদের দখলে।

লন্ডন থেকে ভোরে রওনা দিয়ে খেলা দেখতে এসেছেন গিয়াসউদ্দিন ও তার পরিবার। জয়ের আনন্দ নিয়ে লন্ডন ফিরতে পারছেন বলে খুশি এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেছেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে সকাল বেলা আসতে খুব কষ্ট হয়েছে। তবে এখন সব কষ্ট হাওয়া হয়ে গেছে। হাসিমুখে ফিরতে পারছি। এই ম্যাচটি বাংলাদেশ দলকে আরও বুস্টআপ করবে। সামনের ম্যাচটি আমাদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জের। আমি নিশ্চিত, নটিংহামে এই আত্মবিশ্বাস আমাদের ম্যাচ জিতিয়েও দিতে পারে।’

Print Friendly, PDF & Email