শ্রিংলার রহস্যময় সফরে ১০ প্রশ্নের জবাব মিলছে না (ভিডিওসহ)

বিশেষ প্রতিবেদক |

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা রহস্যময় এক আচমকা সফর। ১৮ ও ১৯ আগস্টের এ সফর নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও জল্পনা। কৌতুহল, গোপনীয়তা ও খানিকটা উত্তাপ সফরটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। কী বার্তা দিয়ে গেলেন ঘাগু এ কূটনীতিক, নিয়ে গেলেন কী? ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের দুইদিনের সফরে দৃশ্যত সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ভ্যাকসিন কূটনীতি। কিন্তু সফরটি যে শুধু ভ্যাকসিন ডিপ্লোমেসিতে সীমাবদ্ধ ছিল না তা পরিষ্কার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন শ্রিংলা।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট আর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মন্তব্যে এটা স্পষ্ট, সাম্প্রতি ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাইসহ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ার কারণে ভারত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রচেষ্টা জোরদার করেছে সাউথ ব্লক। এরই অংশ হিসেবেই কি শ্রিংলা ছুটে আসা? পর্যবেক্ষকরা অতটা সরলীকরণ করতে নারাজ। ভারতীয় গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিস্তা প্রকল্পে একশ’ কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরো জোরদার হচ্ছে। এ বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরের অন্যতম এজেন্ডা ছিল। সিলেট বিমানবন্দর উন্নয়নে চীনা অর্থায়ন বাংলাদেশে চীনের সাম্প্রতিক আরো কিছু বিনিয়োগ ভারতের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই দেশটির কোন কোন মিডিয়ার খবর। এর বাইরেও এ সফরে বিশেষ বার্তার ইংগিত পাওয়া গেছে।

ভারতের প্রভাবশালী আনন্দবাজার পত্রিকা ‘হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বিদেশ সচিব’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে নরেন্দ্র মোদির জমানায় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ভারতের সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দ্য হিন্দু এক রিপোর্টে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় দু’ দেশের সম্পর্কের একটি রোডম্যাপ নিয়ে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গেও ভারতের বিদেশ সচিবের মোলাকাত হয়নি। ড. মোমেন মঙ্গলবার বিকেলেই তিনদিনের এক সফরে সিলেট চলে গেছেন। আসলে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন তা হয়তো এখনই জানা যাবে না।

দু’দিনের সফর শেষে ইয়াংগুনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বিদায় বেলা বলেন, সফরটি সংক্ষিপ্ত ছিল, কিন্তু খুবই সন্তোষজনক সফর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ আর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর অভিব্যক্তি ছিল এমন ‘এসব আলোচনায় মনে হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কোনো সংকট নেই, বরং আমরা যে সোনালী অধ্যায় রচনা করেছি তা সঠিকই আছে।’

তার পরও এ সফর ঘিরে অন্তত ১০টি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

এক. গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা ও দিল্লী জোর গলায় বলছে সম্পর্ক সর্বকালের সর্বোচ্চ মাত্রায় রয়েছে। রক্তের বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের পর্যায়ে চলে গেছে এমন মুখরোচক আলোচনাও চলে আসছে। তাহলে কী এমন ঘটলো যে মহামারি করোনা আতঙ্ক উপেক্ষা করে বিশেষ বিমানে শ্রিংলাকে উড়ে আসতে হলো?
দুই. সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোদির কী এমন বার্তা ছিল যা কূটনৈতিক চ্যানেলে বা প্রযুক্তি সুবিধায় দেওয়া যায়নি, উড়ে এসে দিতে হলো?
তিন. শ্রিংলার বিশেষ বিমানটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করে কেন রাষ্ট্রীয় সংরক্ষিত এলাকা ও সশস্ত্রবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তেজগাঁওর বিমান ঘাটিতে অবতরণ করানো হলো?
চার. শ্রিংলাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে রীতি অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা গেলেন না কেন? ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী একাই অভ্যর্থনা জানালেন কেন?
পাঁচ. প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিকেল তিনটায় নির্ধারিত বৈঠক কেন ৫ ঘন্টা বিলম্বে হলো? এ দীর্ঘ সময় হোটেলে অপেক্ষা করিয়ে শ্রিংলাকে কী বার্তা দেওয়া হলো?
ছয়. প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি কতক্ষণ স্থায়ী ছিল? মি. শ্রিংলা হোটেল থেকে রওয়ানা দেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে। গণভবনে পৌছান ৮টার দিকে। বলা হচ্ছে বৈঠক স্থায়ী ছিল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
সাত. প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটির কোন ছবি রিলিজ করা হলো না কেন? ঢাকা বা দিল্লী কোন পক্ষই এ সংক্রান্ত কোন আলোকচিত্র প্রকাশ করেনি, কারণ কি? যে ছবিটি ভার্চুয়াল জগতে দেখা যাচ্ছে সেটি গত মার্চে শ্রিংলার সফরকালের। শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠকটি গণভবনে হলেও সেটি কি সরাসরি হয়েছিল না দূরত্ব মেনে ভার্চুয়াল?
আট. হাই প্রোফাইল এ বৈঠক নিয়ে কোন দেশই আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করেনি কেন? সংক্ষিপ্ত একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সেরেছেন।
নয়. এমন আলোচিত একটি সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী কারও সঙ্গেই শ্রিংলার সাক্ষাত হলো না কেন?
দশ. মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সাক্ষাতবঞ্চিত হলেও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান ও তার পুত্রদ্বয়, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজাম, দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আলতামাস কবীর ও একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের এজেন্ডা কী ছিল?

-চ্যানেল-এ’র সৌজন্যে

Print Friendly, PDF & Email