আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ৮

জেঁকে বসেছে শীত, উত্তরে দুর্ভোগ চরমে

নিউজ ডেস্ক |

ঠান্ডা বাতাসে কাবু দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। সকাল বেলা দাঁতে দাঁতে ঠুকাঠুকি শুরু হয়ে মানুষের। কষ্ট হয় কথা বলতে। শীতের কামড় থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যেতে চাচ্ছে না মানুষ। রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে জেঁকে বসেছে শীত। হিমের হাওয়ার সাথে দেশ ব্যাপি মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা শীতের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

কুয়াশার কারণে গত বুধবার থেকে সূর্য দেখা যায় না। ফলে পরিবেশও উষ্ণ হচ্ছে না। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ এতো বেশি যে পরিবেশে যতটুকু উষ্ণতা ছিল তাও শুষে নিচ্ছে। দেশব্যাপি বয়ে চলা প্রচন্ড শীতের এটাও একটি অন্যতম কারণ।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার থেকে পরিবেশ ধীরে ধীরে উষ্ণ হতে থাকবে। আজও সূর্যের কিরণও পাওয়া যাবে অপেক্ষাকৃত একটু বেশি। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে ঠান্ডা বাড়লেও এটা কুয়াশার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। কুয়াশা কমে গেলে সূর্য কিরণ স্পষ্ট করে পাওয়া যাবে। এভাবে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।

খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের মধ্যে কেবল রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে মৃদু শৈত্য প্রবাহ থাকবে। গত বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অফিস শৈত্য প্রবাহের আওতা বাড়ার পূর্বাভাস দিলেও গতকাল শুক্রবার হঠাৎ পরিবর্তন আসে এবং শৈত্য প্রবাহ কমে গিয়ে রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত আটকে আছে। তাপমাত্রা কিছু বাড়লে হয়তো কাল কোনো শৈত্য প্রবাহ নাও থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানী ঢাকায় সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ শুক্রবার সারাদেশেই আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্তমান নিম্ন তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটবে আগামী সোমবার থেকে। সোমবার থেকে শীতটা চলে আসতে পারে সহনীয় মাত্রায়।

মূলতঃ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ঠান্ডা আসে বিহারের ওপাশ থেকে হিমালয় অঞ্চল থেকে। সাইবেরিয়া অঞ্চলের শূণ্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের হিমেল হাওয়া আসতে থাকে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে। এটা এসে হিমালয়ের পর্বত শ্রেণীতে বাধা প্রাপ্ত হয়। এর সামান্য একটু অংশ ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতেই এখানে অসহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে।

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ৮

রংপুর প্রতিনিধি জানান, গত ৫ দিন থেকে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৩ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। ফলে রোদের নাগাল পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। এতে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের লোকজন। দেখা দিয়েছে নিউমোনিয়া, সর্দি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র জুটছে না শীতার্তদের। এই অবস্থা আরো চার-পাঁচ দিন থাকার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। অন্যদিকে গত কয়েকদিনে শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বাসহ আটজন। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে রংপুরের ৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন এবং দিনাজপুরের একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা খারাপ। তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ঠান্ডায় বিপর্যস্ত রাজশাহীর জনজীবন

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। কনকনে ঠান্ডায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ। সেইসঙ্গে শীতজনিত রোগী বাড়ছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, মেডিসিন, শিশু ও চর্ম বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। মেডিসিনের চারটি ইউনিটে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২০০ জন। যাদের বেশিরভাগই জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, হাঁপানিতে আক্রান্ত। শিশু ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত।

নওগাঁয় শীতজনিত রোগের আক্রমণ

নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় বুধবার সন্ধ্যা থেকে শীতের প্রকোপ তীব্র হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জেলায় সবর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে জেলার দরিদ্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোজনকে। এ দিকে গত কয়েকদিন ধরে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানারোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন নওগাঁ সদর ও জেলার উপজেলা হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হচ্ছেন নারী, শিশু, বয়স্ক লোকজন। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই অধিক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শীতকষ্ট পোহাতে হচ্ছে দিনমজুর ও কর্মজীবী লোকজনকে। তবে এখন পর্যন্ত জেলায় ব্যাপকভাবে শীত বস্ত্র বিতরণ শুরু না ছিন্নমুল লোকজনের শীতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে দেখা মেলেনি সূর্যের

পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে গতকাল শুক্রবার দিনভর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে দেখা মেলেনি সূর্যের। সেইসাথে দিনভর বইছে উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস। এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হয়নি। দিনভর খড়কুটো অথবা কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছে নি¤œ আয়ের মানুষজন। শীত বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বেড়েছে পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টায় এখানে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শনিবার তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

কুড়িগ্রামে শৈত্য প্রবাহের শঙ্কা

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, গত চার দিন ধরে কুড়িগ্রামে টানা শৈত্য প্রবাহে শীতের তীব্রতা বাড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সারাদিনই কুয়াশার চাদরে আবৃত ছিল কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলসহ পুরো জনপদ। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি সারাদিনও। ভেজা আবহাওয়া ও হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। তীব্র ঠান্ডার কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নদ-নদীর অববাহিকায় ঘন কুয়াশা সহ শীতের তীব্রতা বেশি অনুভুত হচ্ছে। নৌ-পথ ও সড়কপথে যানচলাচল করছে ধীর গতিতে। দু’একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরো হ্রাস পেয়ে জেলায় শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং ২৪ কিংবা ২৫ ডিসেম্বর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।

শীতে স্থবির নীলফামারীর জনজীবন

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, গত চার দিন ধরে নীলফামারীতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শৈত্য প্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে এ জেলার জনজীবন। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষজন। তারা কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে কাজে বের হতে পারছে না। বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত কয়েকদিনে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে।

শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে দৌলতপুরে

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের মতো কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলাতেও জেঁকে বসেছে শীত। ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সাধারন মানুষ জীবন। ঘন কুয়াশার কারণে গত দু’দিন এখানে সূর্যের তেমন দেখা মেলেনি। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। প্রচন্ড শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। দরিদ্র মানুষ ও শ্রমজীবীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পর্যন্ত কিনতে পারছে না। শীত বেড়ে যাওয়ায় বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুত ও জমি চাষবাদ করতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের।

Print Friendly, PDF & Email