‘শিবির ধরা পড়ছে নিয়া যান’

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বিকে হত্যার পর তার কক্ষে মাদক রেখে ‘গণপিটুনির নাটক’ সাজাতে চেয়েছিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী।

জানা গেছে, এই নাটক সাজাতে রাতে পুলিশ ডাকলেও তাদের গাড়ি হল চত্বরে ঢুকতে দেয়নি ছাত্রলীগের সেসব কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবরারের এক সহপাঠী বলেন, ওরা চেয়েছিল মাদকসেবী হিসেবে আবরারকে কলঙ্কিত করে এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে। আমাদের পাহারা এবং শিক্ষকদের তৎপরতার কারণে তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বুয়েটের শেরেবাংলা হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী এমনটাই দাবি করলেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।

সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, আবরারের মোবাইল ও ল্যাপটপে শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু না পাওয়ার পর তার কক্ষে মাদক রেখে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার চেষ্টা করেছিল বুয়েট ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী।

বিষয়টি আবরারের কক্ষের অন্য সহপাঠীদের জানিয়ে দিই। তারা সঙ্গেসঙ্গে ১০১১ নম্বর কক্ষটির দরজা জানালা সব বন্ধ করে দেয়। সারারাত রুম পাহারা দেয়।

১০১১ নম্বর কক্ষের কাছাকাছি একটি কক্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রলীগের সেসব কর্মীরা চেয়েছিল ২০১১ কক্ষে মাদক রাখবে। আমাদের পাহারার কারণে তাদের সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এরপর সবাই ঘুম থেকে ওঠার পর ছাত্রলীগ ধীরে ধীরে গা ঢাকা দেয়। ’

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমাদের খবর দেয়া শিবির ধরা পড়েছে, তাকে নিয়ে যান।’

কিন্তু থানা পুলিশ গেলে তাদের হলে ঢুকতে দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরে শিক্ষকরা আসার পর আমরা লাশ ঢামেক হাসপাতালে পাঠাতে সক্ষম হই।’

প্রসঙ্গত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করল একই বিদ্যাপীঠের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় এখন তোলাপাড় সারা দেশ। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন লাখো কোটি নেটিজেন।

ফেসবুকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির প্রতিবাদে নিজের মত জানিয়েছিলেন আবরার ফাহাদ।

সেই স্ট্যাটাসের জেরে সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে তাকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েটের একই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।

সোমবার ভোরে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝের করিডোর থেকে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।

নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থাকতেন।

Print Friendly, PDF & Email