আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
মার্চের মধ্যে জন-আকাঙ্খার রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ!
মামুন মাহফুজ |
২৭ এপ্রিল থেকে ২৭ অক্টোবর, জন আকাঙ্ক্ষার পথচলা কতদূর এগিয়েছে? ২৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ ’ নামক নতুন একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ আত্মপ্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এটি ছিল নতুন উদ্যোগের প্রাথমিক ঘোষণা মাত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান অঙ্গীকার ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এ অভিযাত্রা শুরু হয়। যারা যারা এই চিন্তার সাথে একমত ও আগ্রহী তাদের কে সংঘবদ্ধ হবার আহবান জানানো হয় এই ঘোষণার মাধ্যমে। আজ এই আহবান ও ঘোষণার ৬ মাস পূর্ণ হলো। এর সাথে সম্পৃক্ত, এর প্রতি নানা কারণে আগ্রহী এবং যারা এর কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের সকলেরই কৌতূহল জাগে ৬ মাসে কতদূর এগিয়েছে আমাদের এই উদ্যোগ?
অনেকেই আশা করেছিলেন তিনমাসের মধ্যেই জন আকাঙক্ষা কিছু চমক নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ চমক সৃষ্টির কোনও বিষয় নয়। এটি গ্রহণযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণের বিষয়। এটি সামগ্রিক চিন্তা ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে কার্যকরি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিষয়। তাই আমরা আবেগ ও চমক সৃষ্টির প্রবণতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বোধ ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে যথাযথ সময় নেয়ার নীতি গ্রহণ করি। তাছাড়া প্রভাবশালী শত রাজনৈতিক দলের ভিড়ে সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির সমন্বয়ে নতুন একটি দলগঠন বিশাল একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যপারও বটে।
সাধারণ অনেকে যেমন তাগাদা দিচ্ছেন দ্রুততার জন্য তেমনি রাজনৈতিক বিদগ্ধ অভিজ্ঞ গুরুজনেরা বলছেন আরও সময় নিতে হবে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণের কাজ যারা হাতে নিতে চায় তাদের ধৈর্যশীল হতে হবে, চিন্তা ভাবনা করে পা ফেলতে হবে। আমরা এই দু’ধরনের তাগাদা ও মতামত কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ এগিয়ে নেয়ার পথে চলতে চাই। ২৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগ্রহী ভাই-বোনদের সাড়া আসতে শুরু করে। কেউ ব্যক্তিগতভাবে আবার কেউবা ছোট ছোট গ্রুপে এসে জানতে চান আমাদের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ সম্পর্কে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আসতে থাকে নানা রকম প্রশ্ন আর আগ্রহের তথ্য। আমরা সীমিত সামর্থ্যের মধ্য দিয়েই সকলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি এবং সংগঠিত করার চেষ্টা করি। কাজ শুরুর কিছুদিন পরই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় পবিত্র রমজান মাস। রমজান উপলক্ষ্যে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি জেলায় ইফতার অুনষ্ঠান ও মতবিনিময় সভা ক‘রে জন আকাঙক্ষার স্বপ্নের পরিধি তুলে ধরা হয় আগ্রহী মানুষের কাছে। জানতে চাওয়া হয় তাদের প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশার কথা।
এরপর জুন মাসে সারাদেশের উৎসাহী সংগঠক ও প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রথমবারের মতো ২দিন ব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়, সাভারস্থ একটি মিলনায়তনে। এতে ১৯টি জেলার ৪৩ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। মূলত: এর পরপরই সারাদেশে কাজের নতুন স্পৃহা এবং গতি ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে নাগরিক সংলাপের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মুখোমুখি হয় জন আকাঙ্ক্ষার সংগঠকগণ। একে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয় জন আকাঙ্ক্ষার চট্টগ্রাম টীম। চট্টগ্রামের পর একইভাবে সিলেট, খুলনা ও রংপুর মহানগর এবং জেলা সমূহের সংগঠকদের নিয়ে মতবিনিময় করা হয়। মতবিনিময় হয় জেলা শহর চাঁদপুর, ঝিনাইদহ, ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষীপুর, গাইবান্ধা, নারায়নগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রামের প্রতিনিধিদের সাথে। একই সাথে ঢাকা মহানগরে নানা পেশা ও বিভিন্ন স্তরের মানুষদের নিয়ে চলে ছোট ছোট সভা ও গ্রুপ আলোচনা। জুলাই মাসে কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়। বিভাগ ভিত্তিক সমন্বয় কমিটি করার তাগাদা আসে প্রায় সকল বিভাগ থেকে। যার ফলশ্রুতিতে ৮ টি বিভাগ, ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, নারী এবং পেশা ভিত্তিক আলাদা আলাদা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। সমন্বয় কমিটি গুলোর তৎপরতায় সারাদেশে গোছানো ভাবে বিস্তৃত হয় জআবা’র কাজ।
একই সাথে দেশের বাইরে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও আগ্রহ প্রকাশ করেন আমাদের উদ্যোগে শামীল হবার জন্য। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, সৌদি আরব, মালেয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশের প্রাবাসীরা যোগাযোগ করতে থাকে। দেশে ও প্রবাসে যারা আমাদের উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হতে চান তাদের সাথে আমরা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করি। আগ্রহীদের আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, ইউকে এবং ইউরোপের জার্মানিতে যোগাযোগ ও সমন্বয় টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দেশে বিদেশে আগ্রহী মানুষদের সম্পৃক্ত করতে অনলাইনে একটি সংযুক্তি ফরম উপস্থাপন করা হয়। তাতে এ পর্যন্ত এক হাজার একশত চল্লিশ জন ফরম পূরণ করে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এই ফরমের মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশের প্রবাসী জন আকাঙ্ক্ষার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। শুধু মানুষকে সম্পৃক্ত করার কাজেই নয় বরং আর্তমানবতার সেবাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ ও আন্দোলনে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে জ আ বা। আগস্ট মাসে হঠাৎ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ক্রমে বন্যাপরিস্থিতির অবনতি হলে বন্যাপীড়িত এলাকায় ছুটে যায় জন আকাঙ্ক্ষার সংগঠকগণ। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে বিতরণ করা হয় খাদ্য ও বস্ত্র সামগ্রী। দেশগঠনে যুব সম্প্রদায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই যুব সমাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ‘যুব সমাজের সংযুক্তি ও ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় হয় ২৪ আগস্ট, রাজধানীর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে। যুবকদের সংগঠিত করার জন্য ঢাকা মহানগর কে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে নিরলস ভাবে কাজ চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাইরে প্রবাসীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত দলের ইশতেহার ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই কাজের জন্য প্রথম থেকেই পাঁচটি আলাদা উপ-কমিটি গঠন করা হয়। উপ-কমিটি গুলো তাদের মেধা ও নিরলস শ্রম ব্যয় করে ইতিমধ্যে খসড়া প্রস্তাবনা দাঁড় করিয়েছেন।
এদিকে খসড়া ইশতেহার ও গঠনতন্ত্র প্রণয়নের পর তা নিয়ে চলছে আলোচনা, পরামর্শ ও বিশ্লেষণ। ‘নতুন রাজনীতির ইশতেহার ও কর্মসূচি’ শীর্ষক সভা করা হয় চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে। এর পাশাপাশি আগস্টে ‘অধিকার ভিত্তিক রাজনীতি: তৃণমূলের ভাবনা’ শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয় কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। বিভাগীয় শহর সিলেটে অন্যমাত্রায় সংগঠিত করা হয় জন আকাঙ্ক্ষাকে। সেখানে জেলা ও থানা ভিত্তিক সমন্বয় কমিটি গঠন করার কাজে মনোনিবেশ করেন সংশ্লিষ্ট সংগঠকগণ। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ”তারুণ্যের কাঙিক্ষত পরিবর্তন: পদ্ধতি না নেতৃত্ব?” শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় সেপ্টেম্বরে। এখানে ছাত্রদের সংগঠিত করার দিক নির্দেশনা মূলক পলিসি নির্ধারণ করা হয়। পরিকল্পনা করা হয় নতুন ধারার ছাত্র রাজনীতি কিভাবে এগিয়ে নেয়া হবে সে সম্পর্কে। অক্টোবরে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে তরুণ ও ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ। বিভিন্ন সভার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় সুষ্পষ্ট বেশকিছু দাবি দাওয়া। এরমধ্যে অন্যতম দাবি হলো আবরারের লেখা সর্বশেষ স্ট্যাটাসটি কে জনগণের মনের অভিব্যক্তি বলে স্বীকার করে নেয়া। দাবি তোলা হয় অবিলম্বে ভারতের সাথে অসম চুক্তি বাতিলের জন্য। দাবি তোলা হয় শিক্ষাঙ্গণ থেকে সকল রাজনৈতিক দলের টর্চারসেল বন্ধের। দাবি তোলা হয় হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
সেপ্টেম্বরে সমন্বয়কসহ কয়েকজন উদ্যোক্তা সংগঠক ইউকে সফর করেন। এই সফরে আশানুরূপ সাড়া নতুনভাবে উজ্জীবিত করে তোলে সবাইকে। তাঁরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিন্তক, গবেষক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে ব্যাপক মতবিনিময় করেন। তাদের এই সফরে ইংল্যান্ডসহ ইউরোপে জআবা’র কার্যক্রম সংগঠিত ও সুসংহত হয়। এছাড়া বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জআবা কে নিয়ে বিশেষ সংবাদ, সাক্ষাৎকার ও টক-শো অনুষ্ঠিত হয়। যার মাধ্যমে জন আকাঙক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যাখা তুলে ধরা সম্ভব হয় বিশ্বপরিমণ্ডলে। জন আকাঙক্ষার বাংলাদেশ একটি নতুন উদ্যোগের নাম। এই উদ্যোগ থেকে বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল জন্ম নেবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। শূন্য থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ। আমাদের এ পথচলায় এরইমধ্যে যারা সারথী হয়েছেন আমরা বিনীতভাবে কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। আমরা সবাই মিলে আমাদের আকাঙিক্ষত রাজনৈতিক পরিবর্তনের শুভসূচনা নিশ্চই করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। এই ছয়মাসে আমাদের কে যেমনিভাবে স্বাগত জানিয়েছেন হাজারো মানুষ, তেমনি তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য, নানা অপবাদ, রটনা ও ট্রল করে হতাশ করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার এটাই হয়ত নিয়ম। তবু এসব ঝড় ঝাপটা মোকাবিলা করেই ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা, এর সুনির্দিষ্ট নীতি কর্মসূচি ও নেতৃত্ব উপস্থাপন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা দেশবাসীর দোয়া চাই। নতুন সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের পথচলায় চাই সকলের ভালবাসা। যারা ভালবাসা দেবেন না তারা অন্তত সমলোচনা নিয়ে হলেও আমাদের পাশে থাকবেন- এটাই একান্ত প্রত্যাশা।