আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
অনুসন্ধান
বাংলাদেশের জেলেরা হাঙর ধরার দিকে ঝুঁকছে কেন
নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশের উপকূলে জেলেরা যেভাবে নির্বিচারে হাঙর ধরছে তাতে হুমকির মুখে পড়েছে এই প্রজাতি। এমনটাই বলছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা গবেষকরা।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হাঙর ধরা নিষিদ্ধ হলেও সমুদ্রে এ কাজ চলছে।
গত কয়েকদিনে বরগুনা এবং ভোলায় জেলেদের কাছ থেকে বেশ কিছু হাঙর জব্দ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের ইন্সটিটিউট-এর অধ্যাপক সাইদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে জেলেরা যেসব হাঙর ধরে সেগুলোর পাখা আলাদা করে সেসব দেশে বিদেশে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
“অনেক সময় দেখা যাচ্ছে শুধু পাখা বা ডানা সংগ্রহের জন্য পুরো মাছ মেরে ফেলা হচ্ছে, পুরোটা ব্যবহার হচ্ছে না,” বলছিলেন অধ্যাপক রহমান।
বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক মো: শরীফ উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, হাঙর ধরা এবং বিদেশে পাঠানো অবৈধ। পুরো কাজটি গোপনে করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ থেকে হাঙর কোথায় যায়?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে হাঙরের পাখা দিয়ে এক ধরনের স্যুপ তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে হাঙরের পাখা চীন, হংকং, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরে যায়। হাঙর ধরার পর পাখনা আলাদা করে বাকি হাঙর ফেলে দেয়া হয়।
“মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ হাঙর মাছ খায় না। তাছাড়া বিদেশে হাঙরের পাখার চাহিদাই বেশি,” বলছিলেন অধ্যাপক রহমান।
জীব বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ডএইড। সংস্থাটি বলছে,সাম্প্রতিক সময়ে হাঙরের পাখা দিয়ে তৈরি স্যুপ খাবার প্রবণতা কমে আসলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এটি বেশ জনপ্রিয়।
সংস্থাটি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতি বছর ১০ কোটি হাঙর শিকার করা হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত কোটি হাঙর শিকার করা হয় শুধু তাদের পাখা সংগ্রহ করার জন্য।
জেলেরা কেন হাঙর ধরছে?
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের উপকূলে এখন দামি মাছ ধরার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যেমন রূপচাঁদা, লাইক্ষ্যা, বড় পোয়া মাছ আশংকাজনক হারে কমছে বলে তারা বলছেন।
ফলে জেলেরা হাঙর ধরার দিকে ঝুঁকছে।
“এখন বিকল্প জিনিস খুঁজছে। কিছু না কিছু তো তাদের করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে দামি মাছ কমে যাচ্ছে,” বলছিলেন অধ্যাপক রহমান।
কক্সবাজারের একজন মৎস্যজীবী জানিয়েছেন, সাধারণ মাছ ধরার চেয়ে হাঙর ধরা বেশি লাভজনক।
“মাছ সবসময় সমানভাবে ধরা পড়ে না। সেজন্য অনেকে মাছ না পাইলে হাঙর ধরে। আবার অনেকে আছে হাঙর ধরার জন্যই যায়,” বলছিলেন ওই জেলে।
সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলছেন, বঙ্গোপসাগরে হাঙর যে হুমকির মুখে রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
“একটি মাছ লক্ষ-লক্ষ ডিম দেয়। কিন্তু হাঙর কোন ডিম দেয় না, তারা বাচ্চা প্রসব করে। স্বাভাবিকভাবেই হাঙরের সংখ্যা কম হয়। এভাবে হাঙর ধরতে থাকলে এটি শেষ হয়ে যাবে,” বলছিলেন শরীফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জেলেরা ২০০ থেকে ২৫০ কেজি পর্যন্ত ওজনের হাঙর ধরে। এমন প্রমাণ মিলেছে বলে তিনি জানান।
হাঙরের পাখা আলাদা করার পর বাকি অংশ শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। এছাড়াও উপজাতীয়দের কাছে শুকনো হাঙরের চাহিদা রয়েছে বলে বলছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সূত্র : বিবিসি