আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
খালেদা জিয়ার মুক্তি কোন পথে?
এবিএন হুদা |
রাজনীতির ময়দানে তখন টানটান উত্তেজনা। দলীয় নেতাকর্মীরা শোডাউন সমেত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পৌঁছে দেন আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার বিরুদ্ধে সেদিন রায় ঘোষণা করেন আদালত। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড। পুরান ঢাকার কারাগারে ঠাঁই হয় তার। এটা ঠিক দু’বছর আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারীর কথা।
দুই বছর পর আজ পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ১০ বছর হয়েছে হাইকোর্টে। আরেকটি মামলায় আদালত তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
সবমিলিয়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। গত বছর এপ্রিল থেকেই বিএসএমএমইউতে আছেন তিনি। নানা রোগে অনেকটা কাবু । একদল চিকিৎসক তার পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না খালেদা জিয়া। কয়েকবার তার জামিন আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। তবে তার উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ রয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের। সর্বশেষ অবশ্য পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষ আবেদন দায়েরের চিন্তা করছেন তারা। অবশ্য কী সে আবেদন তা পরিষ্কার নয়। যদিও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় সরকার চাইলে সাজা স্থগিত করে যেকোনো ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ব্যাতিত এই বিধি কার্যকরের সম্ভাবনা কোথায়?
বিএনপির রাজনীতিতে এমনিতে দীর্ঘকালীন দুর্যোগ চলছে। দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে দলটি রাজপথে কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। ঘরোয়া আলোচনা, মানববন্ধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ দলটির সবধরনের কর্মসূচি। খালেদা জিয়ার কারাবরণের দিনে ঢাকার নয়াপল্টনে বড় সমাবেশ করেছে দলটি। এতে দলের মহাসচিব বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য করা হবে। একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, রাজপথে সমাবেশ খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ নয়। তাহলে কোন পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে?
৭৫ বছর বয়স্ক খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসেছিলেন এক বিশেষ পরিস্থিতিতে। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে রাজনীতিতে আসতে হয়। তবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে শক্ত ভূমিকা রেখে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেন। এরশাদের পতনের পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে চমক দেখান। ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে অবশ্য স্বল্প সময় ক্ষমতায় ছিলেন। ২০০১ সালে ভূমিধ্বস জয় পান। সেসময়কার বিএনপি সরকার নানাভাবেই সমালোচিত। ওয়ান ইলেভেনে আসা বিপর্যয় এখানো কাটাতে পারেননি খালেদা জিয়া এবং তার দল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ৩৫টি মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তার আইনজীবী ও বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক পন্থায় জেলে আটকে রেখেছে। অসুস্থতা ও মানবিক দিক বিবেচনা করে জামিন আবেদন করলেও তাকে জামিন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে আইনজীবী ও বিএনপির ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদরা কেউই ব্যর্থ নন। আইনজীবীরাতো তাদের আইনি লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। অপরদিকে রাজনীতিবিদরাওতো কম আন্দোলন করেনি। তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। জমি জমা বিক্রি করে এখন তাদের অনেকেই অর্থ কষ্টে ভুগছেন। আন্দোলন করলেই সরকার নতুন নতুন মামলায় জড়িয়ে দেন। বিএনপির নীতি নির্ধারকদের বেশ কয়েকজন মামলার দণ্ড মাথায় নিয়ে দিন পার করছেন।মতামত দিন