শিরোনাম :

  • রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে মামলা, পাল্টা অভিযোগ প্লাবনের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ এনে দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার রেজাউল করিম প্লাবনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার স্ত্রী সমকালের স্টাফ রিপোর্টার সাজিদা ইসলাম পারুল।

সোমবার (১১ মে) দুপুরে পারুল বাদী হয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সাজিদা ইসলাম পারুলের বিরুদ্ধে আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে দ্বিতীয় বিয় , অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক, উশৃংখল জীবন যাপনসহ পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন প্লাবন। পারুলকে নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগের প্রমাণও চান প্লাবন।

সোমবার দায়ের করা মামলার এজাহারে পারুল অভিযোগ করেন, সংবাদকর্মী হিসেবে ঘনিষ্ঠতার পর রেজাউল করিম ওরফে প্লাবনের প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ি। গত ২ এপ্রিল আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। ঢাকার মীরবাগে ঘর-সংসার শুরু করি। এরপর আমি তাকে শ্বশুরবাড়ি নেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু আমার প্লাবন যৌতুকের দাবি তোলে। সে জানায়, আমার বাড়িতে তোমাকে নিতে গেলে একটি ফ্ল্যাট বা নগদ ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। তখন আমি বুঝতে পারি প্রতারণা করে যৌতুকের লোভে সে আমাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের পরই জানতে পারি বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। নানাভাবে বুঝিয়ে যখন যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানাই এরপর আমার ওপর নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন।

এর মধ্যে গত ২৯ এপ্রিল প্লাবন আমাকে জানায়, বাড়িতে তার মা খুবই অসুস্থ। তাকে জরুরিভিত্তিতে কুড়িগ্রামের চিলমারীর নিজ বাড়িতে যেতে হবে। যেহেতু আমার শাশুড়ি অসুস্থ্ সে কারণে আমিও তার সাথে যেতে চাই। প্লাবন আমাকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে এ সব নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। আমাকে মারধর করে। ওই সময় আমি তাকে জানাই, আমার প্রেগনেন্সি পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বেশি মারতে শুরু করে। এরপর বাসায় ফেলে রেখেই সে মোটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়িতে চলে যায়।

এরপর আমি আমার মা-বোন এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে পরামর্শ করি। তারা আমাকে সুস্থ বোধ করলে অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গত ৫ মে শাশুড়িকে দেখার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে চিলমারীতে যাই। কিন্তু আমাকে শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরা যৌতুক দাবি করেন। সবাই মিলে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকরা আমাকে উদ্ধার করে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

চিলমারীতে মামলা করতে চাইলে স্থানীয় থানা মামলাটি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ঢাকায় ফিরে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরই মধ্যে আমার গর্ভের ভ্রূণটি নষ্ট হয়ে যায় এবং আমি চলাচলের শক্তি হারাই।

এ ব্যাপারে জানতে রেজাউল করিম প্লাবনের মোবাইল নম্বরে কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ফেসবুক আইডিতে এ নিয়ে কিছু বক্তব্য পাওয়া গেছে।

৭১ টিভির টকশো ‘একাত্তর জার্নালে’ প্লাবন-পারুলের মধ্যকার সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় শনিবার রাতে । টকশো চলাকালে অনলাইনে যুক্ত থাকা প্লাবনের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেখানে পারুলের অভিযোগের জবাব দিতে পারেননি প্লাবন। এ প্রেক্ষিতে রেজাউল করীম প্লাবন তার ফেসবুক ওয়ালে ১০ মে শনিবার রাত পৌনে ১২টায় দেয়া স্ট্যাটাসে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন।

সেখানে প্লাবন লেখেন, একাত্তর জার্নালের সংযোগটি কেটে গেলে আমি মোবাইল ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নেয়া হয়নি। নারী নির্যাতন নিয়ে মিথ্যাচারের সর্বোচ্চ প্রচার হলো। এযেন মরুভূমিতে ধুলা উড়িয়ে মহাসাগর বানিয়ে ফেলার মত অবস্থা। বিয়ের একমাস হলেও সংসার জীবন মাত্র দশদিনের। এরমধ্যে নির্যাতনের কথা চলে এসেছে? প্রেম থেকে শুরু করে সব কিছুর প্রমাণ আছে তার কাছে। এ প্রমাণটাও জাতিকে দেখানো উচিত। মোবাইল ফোনের হাজার হাজার স্ক্রিণ শর্ট যদি থাকে নিশ্চয়ই এটাও থাকার কথা।


প্লাবন ফেসবুকে আরও লেখেন, আমাকে না জানিয়ে উড়ো খবরের ওপর ভিত্তি করে তিনি চিলমারী গেলেন। কোথায় কার সাথে বিয়ের আয়োজন চলছিল তার তথ্য কিন্তু আজও জানাতে পারেননি তিনি।
বাড়ির সামনে গেলেন। উঠানেও নামলেন না। নিজে হাতে পুরো বাড়ির ভিডিও করলেন। সমকালের চিলমারী প্রতিনিধিসহ অনেকেই সেই দৃশ্য ভিডিও করলেন। আমার পরিবারের লোকজন আপনাকে মারধর করল সেই ভিডিও আপনি কেন ফেসবুকে কিংবা আপনার পরিচিতজনদের দিলেন না?
কমপক্ষে ৫০ জন মানুষ সেদিনের ঘটনার স্বাক্ষী আছে। আপনি মিথ্যাচার করতেই থাকুন। আমার শতভাগ বিশ্বাস, এই মিথ্যা বানানো কথা গুলো আপনার না। কেউ সাজিয়ে দিয়েছেন। একদিন বিবেক আপনাকে দংশন করবেই।
একপক্ষের কথায় তো এটা একেবারে ফৌজদারি অপরাধ বানিয়ে ফেললেন। আমারও কিছু বলার আছে, নিশ্চয়ই কোনো সিদ্ধান্তের আগে আমাকেও আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বলতে দিবেন।

এদিকে সোমবার মামলা হওয়ার পর দেশনিউজ এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে প্লাবনের সেল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একই দিন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ কে দেয়া বক্তব্যে রেজাউল করীম প্লাবন কিছু পাল্টা অভিযোগ তুলেন। তিনি জানান, গত ৩০ এপ্রিল পারুলকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি।

পারুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে প্লাবন বলেন, “শরীয়াহ মোতাবেক পূর্বে কোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকলে সেটা স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই অবগত করতে হয়। কিন্তু বিয়ের পরে আমি জানতে পারলাম, আমার স্ত্রীর আগে আরও একটি বিয়ে হয়েছে এবং আমার সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিবাহ। এছাড়া সারা রাত জেগে ফোনালাপ, অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনসহ নানা কারণে আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। এই বিষয়গুলো আমি তালাকের নোটিশেও উল্লেখ করেছি।”

তালাক নোটিশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পারুল আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি আইনগতভাবে কিছু এখনও পাননি। হোয়াটস অ্যাপে তাকে একটি ‘ডিভোর্স লেটার’ পাঠানো হয়েছে। এটার কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন।