• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আশুলিয়ায় কুপিয়ে ও মাথা থেতলে দিনমুজুর ভ্যানচালককে হত্যা করলো আ’লীগের ক্যাডাররা

Kupiye Khunনিজস্ব প্রতিনিধিঃ সুদের টাকার দাবিতে মঈনুদ্দীন নামে এক দিনমুজুরকে পিটিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে মোরশেদ আলম নামের সৈনিকলীদের এক নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয় হাবিব ক্লিনিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। আশুলিয়ার পুর্ব ডেন্ডাবর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও আওয়ামীলীগের নেতারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যর্থ চেস্টা করছে বলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

মোরশেদ আলম জানান, মইনুদ্দীনের কাছে ৩হাজার টাকা পেত স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। বেশ কিছু দিন ধরেই টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল রফিকুল। গত সোমবার বিকেলে টাকা দিতে না পারলে খবর আছে বলে হুমকি দেয়। পরে মইনুদ্দীন তার প্রতিবেশী ধামসোনা ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ আলমের কাছে ঘটনাটি বলেন। এরপর মোরশেদ আলম মইনুদ্দীনকে নিয়ে রফিকুলের বাড়ীর সামনে চায়ের যান। সেখানে রফিকুলকে ১হাজার টাকা দিয়ে বাকি ২ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় চান।

এসময় রফিকুল ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, টাকা দিতে না পারলে ঘরের আসভাবপত্র দিতে হবে। এতে মঈনুদ্দীন প্রতিবাদ করায় রফিকুলের সঙ্গী মেহেদী ও তুষার মোরশেদ ও মইনুদ্দীনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

তখন মেহেদী ডেন্ডাবর এলাকার ধামসোনা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সেকেন্ড ইন-কমান্ড হাসান মন্ডলকে ফোন করে জানান।খবর পেয়ে হাসান মন্ডল মইনুদ্দীনকে সাথে নিয়ে মোরশেদকে তার বাসায় যেতে বলেন। এরপর মোরশেদ মইনুদ্দীনকে নিয়ে হাসানের বাসার সামনে গিয়ে তার খোঁজ করেন। এসময় সোহেল আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুলের ক্লাবে বসতে বলে। এর কিছুক্ষন পর সোহেল ফের মইনুদ্দীন ও মোরর্শেদকে ক্লাব থেকে ডেকে নিয়ে পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে যায। সেখানে মুহুর্তের মধ্যে লোহার রড, হকেস্টিক, চাপাতি ও দেশিয় অস্ত্র-সস্ত্র হাতে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসীকে নিয়ে হাজির হয় মেহেদী। এরপর মোরশেদ ও মইনুদ্দীনকে ঘেরাও করে লোহার রড়,হকিস্টিক দিয়ে মারধর ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর ইটদিয়ে মইনুদ্দীনের মাথা থেঁতলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।

পরে স্থানীয়রা মইনুদ্দীন ও মোরশেদকে উদ্ধার করে পল্লিবিদ্যুৎ এলাকার হাবীব ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখান থেকে মইনুদ্দীনকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে মঈনুদ্দীন মারা যান।

পরে নিহতের পরিবারকে দিয়ে মউনুদ্দীনের লাশ তার গ্রামেরবাড়ী শেরপুর জেলার নলকার ডাকাইতা কান্দা এলাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু ঘটনাটি সাভার থানা পুলিশ না জানায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। পরে খবর পেয়ে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসীনুল করিম নলকা থানার ওসিকে ফোন করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য ফেরত পাঠাতে বলেন।

সাভার থানার ওসি বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আর এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আহত মোরশেদ জানান, মামলা দিলে তাকেও হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর সন্ত্রাসীদের ভয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মন্ডল জানান, তাদেরকে বিচারের জন্য ডেকে ছিলেন তিনি, মারধরের জন্য নয়। ঘটনাটি অনাকাঙ্খিতভাবে ঘটে গেছে। আর আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি এ ব্যাপারে হাসানের কাছে ঘটনাটি শুনেছেন।

নিহতের বড় ভাই রাজ্জাক বলেন, আমার ভাইকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা থানায় মামলা দায়ের করা হবে।
নকলা থানার অফিসার ইনচার্জ হায়দার আলী জানান, আশুলিয়া থানার ওসির তথ্য মতে নিহত মইনুদ্দীন এর লাশ উদ্ধার করে শেরপুর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email