আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
শাহজালাল বিমানবন্দরে ফের নিরাপত্তা বাড়ানোর তাগিদ যুক্তরাজ্যের
নিউজ ডেস্কঃ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় বেশ কিছু ত্রুটি থাকায় যুক্তরাজ্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিমানবন্দরের টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সময়সীমাভিত্তিক একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। এটি না হলে ঢাকা-লন্ডন রুটে নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দুই দফা ঢাকা সফরের সময় এই অভিমত দিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তাবিষয়ক দপ্তরের প্রতিনিধিদল।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাজ্যের কাছে আজ সোমবার একটি কর্মপরিকল্পনা দেওয়ার কথা বাংলাদেশের। তিন মাসের মধ্যে ওই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, এটি দেখতে চায় যুক্তরাজ্য।
বেসামরিক বিমান পরিবহন (সিভিল এভিয়েশন) কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে রাশিয়ার একটি বিমান সিনাই উপত্যকায় বিধ্বস্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। সন্ত্রাসীদের পেতে রাখা বোমায় রাশিয়ার বিমানটি মিসরের শারম আল শেখ বিমানবন্দর থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে সিনাই উপত্যকায় বিধ্বস্ত হয়। এরপর থেকে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট বাংলাদেশসহ আরও কিছু দেশকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে তাগাদা দিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তাবিষয়ক দপ্তর বিশ্বের ২০টি দেশের নিরাপত্তা-ঝুঁকিতে থাকা ৩৮টি বিমানবন্দরের যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে আছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলটি নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নিরাপত্তা বাড়াতে যেসব পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো আমরা আমলে নিয়েছি। এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জনবলকাঠামোতে ছিল। বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও আর্মড পুলিশ থেকে প্রায় আড়াই শ সদস্য নিয়ে এই বাহিনী গঠন করা হবে। বাহিনীর নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে করে নিরাপত্তার পাশাপাশি কারিগরি দিকগুলো সুচারুভাবে পালন করা যায়।’
যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের কাছে প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা আমাদের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা দিতে বলে। আমরা সোমবারের (আজ) মধ্যে তাদের কাছে অ্যাকশনেবল সাসটেইনেবল প্ল্যান পাঠাব; যেখানে লোকবল, প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বিষয় থাকবে।’
যুক্তরাজ্যের পর্যবেক্ষণ ও অগ্রগতি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দিল্লিতে কর্মরত যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তাবিষয়ক দপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা জন লভসি গত বছরের ১১ নভেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর দুই দফা ঢাকা সফর করেন। এ সময় তিনি বিমানবন্দর ঘুরে টার্মিনালে যাত্রীদের আসা-যাওয়া, মালামাল পরীক্ষা (স্ক্যানার যন্ত্রের মাধ্যমে), বহির্গমন কাউন্টার ছাড়ার আগে যাত্রীদের মালামালে ট্যাগ লাগানোর প্রক্রিয়া, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কর্মীরা কীভাবে মালামাল বিমানে নিয়ে যান, তা খতিয়ে দেখেন। এরপর যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে।
ওই সফরের পর যুক্তরাজ্যের দেওয়া প্রতিবেদনে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে স্ক্যানিং মেশিন চালানোর মতো দক্ষ জনবল নেই। স্ক্যানিং মেশিনগুলোও ত্রুটিপূর্ণ। এসব যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রপাতি পরিচালনায় যুক্ত লোকজনকে ফাঁকি দিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারে। ওই প্রতিবেদনে বিমানবন্দরে লোকজনের যাওয়া-আসা, মালামাল (ব্যাগেজ) ব্যবস্থাপনা, বিস্ফোরক চিহ্নিত করার ব্যবস্থা এবং উড়োজাহাজে খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় নিরাপত্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্য উদ্বেগ জানানোর পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে ইতিমধ্যে শক্তিশালী স্ক্যানিং মেশিন ও বিস্ফোরক চিহ্নিত করার মেশিন বসানো হয়েছে। যাত্রীদের বহির্গমনের সময় নিরাপত্তা-তল্লাশির ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে। মালামাল ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মীদের ব্যাপারে গোয়েন্দা ও পুলিশের নিরাপত্তা ছাড়পত্র নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের যাত্রীদের স্ক্যানিংয়ের জন্য নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের ব্যবস্থা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সরকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং নিরাপত্তাব্যবস্থার যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।