শিরোনাম :

  • শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

খালি হাতে সউদী থেকে ফিরলেন আরও ৮৬ হতভাগা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও ৮৬ হতভাগ্য বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন সউদী থেকে।

বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন হতভাগ্য ৮৬ বাংলাদেশী। এদের একজন বাহারউদ্দিন। বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটে।

বাহার উদ্দিন জানান, ২৬ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। কন্সট্রাকশনের কাজ করতেন। মাঝখানে ছয়বার দেশে ঘুরে গেছেন। এইবার সৌদি আরবে যাওয়ার পর আর আকামা লাগেনি। ফলে অবৈধ হয়ে যান তিনি। আকামা করাতে নিয়োগকর্তাকে ৯০০ রিয়াল দিয়েছিলেন। কিন্তু, আকামা করে দেয়নি। ফলে অবৈধভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজ করতেছিলেন বাহার উদ্দিন। রাস্তা থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। জেলখানাতে গিয়ে পরিচয় হয় একই জেলার ইলিয়াস আলীর সাথে। তিনিসহ একই জেলখানায় থাকা আরো কয়েকজন বাংলাদেশী ফিরেছেন একসাথে।

বাহার উদ্দিনের ভাষ্য, অনেক বছর সৌদি আরবে ছিলাম। জীবনে এমন পরিস্থিতি কখনো সৌদি আরবে দেখিনি। সেখানকার পুলিশ বেপরোয়া হয়ে গেছে। বৈধ-অবৈধ দেখছে না। রাস্তা থেকে ধরে সোজা জেলে। এরপর পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে।

রাত সোয়া ১১টার দিকে ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলেও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের বের হতে থাকেন রাত পৌনে ১২টার পর থেকে। এক এক করে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন হতভাগ্য এসব বাংলাদেশী। যারা এক বুক স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সংসারের অভাব অনটন দূর করবেন, স্ত্রী সন্তানদের মুখে হাসি ফুটাবেন। ভালভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুঁনেছিলেন। কিন্তু, ওইসব স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে তাদের জীবনে এখন ঘোর অমানিশা। এক বুক হতাশা নিয়ে একেবারেই খালি হাতে দেশে ফিরলেন তারা।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেকে ৩-৫ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। এদের কারো আকামা ছিল, কারোর বা আকামা হয়নি। রাস্তা থেকে উভয়কেই পুলিশ ধরে জেলে পুরেছিল। এরপর কিছুদিন জেল খেটে ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

জেল থেকে সরাসরি বিমানে তুলে দেয়া হয়েছে অনেককে। তাই তারা যে দেশে ফিরেছেন এটাও অনেকের স্বজনদের অজানা। তারা যখন ফেরেন, তখন বিমানবন্দরের বাইরের গেটে শত শত মানুষের ভিড়। তারা অপেক্ষা করছেন বিভিন্ন দেশ থেকে স্বজনরা ফিরবেন বলে। কিন্তু, বুধবার রাতে সৌদি আরব থেকে ফেরা লোকদের মধ্যে দুই একজন বাদে বাকিদের কারোরই স্বজন উপস্থিত ছিলেন না বিমানবন্দরে। বেশির ভাগই ছিলেন ক্ষুধার্ত। ব্রাক মাইগ্রেশনের এক প্যাকেট খাবার ও পানি পেয়ে পাশে বসেই খেয়ে নিয়েছেন তারা। মধ্যরাত। তাই বিমাবন্দরের ভেতরেই সকাল হওয়ার অপেক্ষা এক কোণায় বসে থাকতে দেখা যায় অনেককে।

সৌদি ফেরাদের বেশির ভাগের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। যেন রাজ্যের দুঃখ-কষ্টগুলো ফুটে উঠেছে তাদের চেহারায়। তাদের কেউ জমিজমা বিক্রি করে আবার কেউ ঋণ করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। স্বজনদের কাছে ফিরে যাচ্ছেন এক বুক হতাশা নিয়ে। কিভাবে সংসার চলবে, কিভাবেই বা ঋণের বোঝা দূর করবেন এই টেনশন তাদের মনে।

বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে সৌদি আরব থেকে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ফেরত এসেছে। যাদের বেশির ভাগই আকামা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ গ্রেফতার করে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।