এবি পার্টির ইফতারে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের সম্মেলন
‘যৌনকর্মে রাজি না হলে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে বুক ও স্পর্শকাতর অঙ্গে ছ্যাঁকা দেয়া হতো’
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি |
যৌনাঙ্গের নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। ছোপ ছোপ রক্তাক্ত চিহ্ন।যৌনকর্মে রাজি না হওয়ায় জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে তাঁর বুক ও স্পর্শকাতর অঙ্গে ছ্যাঁকা দেওয়ায় এ অবস্থা । বৈদ্যুতিক তার দিয়ে হাত, পা ও দেহের বিভিন্ন অংশে আঘাত করা হতো। প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হয়ে অচেতন হয়ে পড়তেন। সৌদি-ফেরত এক নরীর অবস্থা এভাবেই বর্ণনা করেছেন তার চিকিৎসক।
ভাগ্যোন্নয়নের আশায় প্রায় সাত মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের এক তরুণী (২০)। কিন্তু তাঁকে ব্যবহার করা হয় যৌনকর্মী হিসেবে। আপত্তি তোলায় প্রায়ই মারধরের শিকার হতেন। মারাত্মক অসুস্থ হয়ে একপর্যায়ে কর্মস্থল থেকে পালান। পরে পুলিশের সাহায্যে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবশেষে গত ২৬ নভেম্বর দেশে ফেরেন তিনি।
নিজ বাড়িতে বসে জীবনের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা প্রতিবেদককে বলছিলেন তরুণী। পাশবিক আচরণের দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়তেই কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘কী যন্ত্রণায় কেটেছে আমার ছয়টি মাস!’
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, বিয়ের সাত মাসের মাথায় স্থানীয় আদম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের প্রলোভনে পড়ে গত ২৮ এপ্রিল ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরবের দাম্মামে। সেখানে যাওয়ার পরই তাঁর মোহ ভঙ্গ হয়। গৃহকর্মীর কাজ না দিয়ে বরং তাঁকে ব্যবহার করা হতো যৌনকর্মী হিসেবে। এ কাজে আপত্তি জানালে তাঁর ওপর চলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনকারী জানায়, বাংলাদেশি টাকায় চার লাখ টাকায় তাঁকে কেনা হয়েছে যৌনকর্মী হিসেবে।
নির্যাতনকারীদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেও রক্ষা করতে পারেননি নিজের সম্ভ্রম। যৌনকর্মে রাজি না হওয়ায় জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে তাঁর বুক ও স্পর্শকাতর অঙ্গে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। বৈদ্যুতিক তার দিয়ে হাত, পা ও দেহের বিভিন্ন অংশে আঘাত করা হতো। প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়তেন।
এই খবর জানতে পেরে স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় আদম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালকে চাপ দেন তরুণীর স্বামী। ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাপ দিলে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ৬ মাস ২৬ দিন পর ২৬ নভেম্বর তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
তরুণীর মা বলেন, ‘আমার ভালো মেয়ে বিদেশে গিয়ে এখন আধা মরা হয়ে দেশে ফিরেছে।’
স্বামী বলেন, বিয়ে করেছেন মাত্র সাত মাস হলো। বিয়ের পরপরই আদম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের মাধ্যমে সৌদিতে গৃহকর্মীর কাজের প্রস্তাব আসে তাঁর স্ত্রীর জন্য। তাঁর স্ত্রী প্রথমে যেতে চাননি। সৌদি আরবে ভালো নিরাপত্তায় ঘরের কাজকর্ম করে বেশি টাকা রোজগারের কথা শুনে একসময় রাজি হন। মোস্তফা কামালই পাসপোর্ট, ভিসা সব করে দেন।
তরুণীর স্বামী আরও জানান, সৌদি আরব যাওয়ার পরপরই তাঁর স্ত্রীর ওপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। প্রথম কয়েক দিনে দেশে যোগাযোগের সুযোগ দিলেও পরে সে সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্ত্রী এক সৌদিপ্রবাসীর সহযোগিতায় নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও দেশে পাঠান। ছবি ও ভিডিও দেখে তিনি (স্বামী) পাগলপ্রায় ছিলেন। দেশে ফেরার পর থেকে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে অবশ্য আদম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
দেশে ফিরে শ্রীমঙ্গলের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন তরুণী। ক্লিনিকের প্রধান নার্স দীপ্তি দত্ত জানান, নির্যাতনে তরুণীর যৌনাঙ্গের নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। ছোপ ছোপ রক্তাক্ত চিহ্ন। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হতে বেশ কিছু সময় লাগবে। তবে মানসিক ধকল ভোগাবে।
আদম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, যৌন হয়রানিসহ শারীরিক নির্যাতনের খবর পেয়ে তরুণীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এজেন্সির মাধ্যমে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন এবং এখন চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি আর্থিক সহায়তা করে যাচ্ছেন। এমনকি তাঁর নামে জীবন বিমার টাকা পেতেও তিনি এজেন্সির মাধ্যমে চেষ্টা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, তরুণীকে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে। তা ছাড়া তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌদি আরবে যোগাযোগের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।