ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের বিভেদ পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের লাভবান করবে – খেলাফত মজলিস
সাঈদীর মামলায় সাক্ষী বাবুলের মৃত্যু ও বয়স বিভ্রাট, ফেসবুকে আলোচনার ঝড়
এবিএন হুদা ♦
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে কারাভোগরত প্রখ্যাত মোফাচ্ছিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আবদুল হালিম খলিফা ওরেেফ বাবুলের মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৪মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে। পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি গ্রামে তার মৃত্যু হয়। স্বভাবতঃই তার মৃত্যুর সংবাদ গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু বিভ্রাট ও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে তার বয়স নিয়ে। ফলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।


শুক্রবার (১৫মে) দুপুরের আগে থেকেই বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে মৃত্যুর খবরটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। প্রত্যেকটি সংবাদেই মৃত আবদুল হালিম খলিফার বয়স উল্লেখ করা হয় ৫৫ বছর। তার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ভাইরাল হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা হয়, মৃত্যুকালে বাবুলের বয়স ৫৫ হলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে তার বয়স ছিল বড়জোর ৬ বছর। ছয় বছর বয়সী শিশু কি করে সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধ দেখেছে এবং স্মরণ রেখে ৪৪ বছর পর সাক্ষী দিয়েছে? নতুন করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সাক্ষীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। রাত পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে।

এরই এক পর্যায়ে শীর্ষ ইংরেজী দৈনিক দ্য ডেইলী স্টার বাংলা ভার্সনের অনলাইনে প্রকাশিত রিপোর্টে বাবুলের বয়স পরিবর্তন করে ৬৩ করা হলে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়। ফেসবুকে অনেকে ডেইলী স্টারের আগের ও পরের রিপোর্টের স্ক্রীণ শট দিয়ে এবং পাশাপাশি অন্যান্য গণমাধ্যমের রিপোর্ট তুলে ধরে সমালোচনার ঝড় তুলেন। প্রশ্ন তুলেন কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বয়স ৮ বছর বেড়ে গেলো কেন?

দেশনিউজ.নেটের পক্ষ থেকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সন পর্যবেক্ষ করে দেখা গেছে প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনে প্রথমে ৫৫ বছর বয়স উল্লেখ করে প্রথমে খবরটি প্রকাশ করা হলেও পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, যুগান্তর, সমকাল, কালের কন্ঠের মত প্রথম সারির পত্রিকাগুলো মূদ্রণ সংস্করণে খবরটি প্রকাশ করেনি। কয়কটিতে অনলাইন সংস্করণে খবরটি কিছু সময়ের জন্য স্থান পেলেও পরে আর দেখা যায়নি। অবশ্য দৈনিক যুগান্তরের অনলাইনে খবরটি বহাল আছে এবং সেখানে বয়স ৫৫ বছরই উল্লেখ আছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া দ্য ডেইলী স্টার বাংলা অনলাইনের দুটি স্ক্রীণ শটে দেখা যাচ্ছে- প্রথমটির প্রকাশকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিট। এই সংবাদের প্রথম প্যারার শেষ লাইনে লেখা হয়েছে ‘তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর’। ডেইলী স্টার পরিবর্তিত সংবাদটি প্রকাশ করে ৭টা ৩৭ মিনিটে। সেখানে পুরো রিপোর্ট অপরিবর্তিত থাকলেও কেবল প্রথম প্যারার শেষ লাইনে সংশোধ করে লেখা হয়- ‘তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর’।

অনলাইনে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, যতগুলো অনলাইন গণমাধ্যম সংবাদটি প্রকাশ করেছে তার প্রায় সবগুলোতে বয়স ৫৫ বছরই উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন প্রথম সারির অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ ডটকম, বাংলানিউজ২৪ ডটকম, আরটিভি অনলাইন, প্রিয় ডটকম, পুর্ব-পশ্চিম বিডি তাদের রিপোর্টে ৫৫ বছর বয়স এখনও অপরিবর্তিত রেখেছে। আরেক জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের রিপোর্টে বয়স ৫৫ বছর উল্লেখ করলেও পরে রিপোর্ট থেকে বয়স ডিলিট করে দেয়। প্রথম প্যারায় নামের পরেই ব্রাকেটবন্দী করে বয়স উল্লেখ ছিল। অবশ্য তাদের সহযোগী সংবাদ মাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা ভার্সেন ৫৫ বছর বয়স বহাল রেখেছে।

আমাদের সময় ডটকমের অনলাইনে বয়স ৫৫ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য দ্য ডেইলী স্টারের পরিবর্তিত বয়সের কাছাকাছি ৬২ বছর উল্লেখ করেছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিবর্তন ডটকম।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, মাওলানা সাঈদীর মামলার আরেক সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারের মৃত্যু হয় ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। প্রথম আলোতে তখন প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী তারও মৃত্যুকালে বয়স ছিল ৫৫ বছর। দুুবৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে সাঈদীর মামলার বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের এক নম্বর সাক্ষী মাহমুবুল আলম হাওলাদার অভিযোগ করেছেন যে তিনি দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। গত বছর নবেম্ভরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক আবেদেন তিনি পুলিশ-বেষ্টিত দুর্বিষহ জীবন থেক মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হয়ে আল্লামা সাঈদী এখনও জেলে আছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে আল্লামা সাঈদীকে ফাঁসির দন্ড দেন। পরে আপীল বিভাগ ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফাঁসির আদেশের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদন্ড দেন। পরে সাঈদীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদন্ডই বহাল রাখে আপীল বিভাগ।
সাম্প্রতিক সময়ে বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনা করে আল্লামা সাঈদীকে নির্বাহী ক্ষমতায় মুক্তি দেওয়ার জন্য তাঁর ভক্তরা অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছিল।