কল্যাণপুরে পোড়াবস্তিতে রহস্যজনক আগুন

0-2নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কল্যাণপুর নতুনবাজার এলাকায় পোড়াবস্তিতে রহস্যজনকভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ এই আগুন দিয়েছে বলে বস্তির বাসিন্দাদের অভিযোগ। শুক্রবার সকাল ১০ টায় আগুনের সূত্রপাত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান জানান, সকাল ১০টায় পোড়াবস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দীর্ঘক্ষণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি জানান, স্থানীয়দের বাধার মুখে প্রথমে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওই বস্তিতে প্রবেশ পারেননি। পরে পুলিশের সহায়তায় ওই স্থানে ঢুকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন তারা।

বস্তির কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশনের (সিবিও) সাধারণ সম্পাদক মো. হান্নান আকন্দ বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে কে বা কারা বস্তির আট নম্বর অংশে আগুন দেয়। পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই আগুন লাগানো হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

বস্তির বাসিন্দা আশরাফ অভিযোগ করেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ বৃহস্পতিবার বস্তি উচ্ছেদে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বস্তিবাসীদের কৌশলে সরিয়ে দিতে এ আগুন লাগানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে বস্তিতে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বস্তিবাসীদের কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এরপর গতকাল দুপুরে কল্যাণপুরের পোড়া বস্তিতে চলমান উচ্ছেদ অভিযানের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বস্তিবাসীদের কোনো প্রকার হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। গৃহায়ণসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

আইনজীবীরা জানান, ২০০৩ সালে পোড়া বস্তিতে উচ্ছেদ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর ও দুজন বস্তিবাসী হাইকোর্টে রিট করেন।

একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর কল্যাণপুরের পোড়া বস্তিতে স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরে ২০০৬ সালে মামলার বাদী উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আরেকটি আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। বিভিন্ন সময়ে এই স্থগিতাদেশ বৃদ্ধি করা হয়।

২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বস্তি নিয়ে মূল মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলে রায় দেন।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরও গতকাল পোড়া বস্তি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যান রিটকারীর আইনজীবীরা। শুনানি শেষে আদালত উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

Print Friendly, PDF & Email