শিরোনাম :

  • রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রামে বিস্ফোরণ: দায় এড়াচ্ছে কর্ণফুলি গ্যাস কর্তৃপক্ষ!

বিশেষ প্রতিনিধি |

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গ্যাস লাইন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এঘটনায় আহত হয়ে আরও ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিস ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থা এটাকে গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণ বললেও তা মানতে নারাজ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তাদের দাবি, গ্যাস লাইন নয় সেপ্টিক ট্যাংক থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সংস্থার এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণ নিয়ে মানুষের মধ্যে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আর কর্ণফুলি গ্যাস কর্তৃপক্ষের দাবিকে দায় এড়ানোর কৌশল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, পাথরঘাটায় পাঁচতলা বিশিষ্ট বড়ুয়া ভবনটির নিচতলায় ছিল গ্যাস লাইনের রাইজার। তারপাশে ছিল একটি রান্নাঘর। ঠিক এর কাছাকাছি জায়গাতেই ঘটে এ বিস্ফোরণ। গ্যাসের রাইজারের পাশের বাসাটি তাতে থাকে স্কুলছাত্রী অর্পিতা রানী দেবি ও তার পরিবার। বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে অর্পিতা। তিনি জানান, চুলায় আগুন ধরাতে গিয়ে হঠাৎ করেই বিস্ফোরণ হয়।
এছাড়া ঘটনার পরই পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা। তারা বলছে, লাইনে ছিদ্র হয়ে হয়ত গ্যাস জমেছিল অনেকদিন ধরে। তাই আগুনের স্পর্শ পেয়েই বিস্ফোরণ হয়েছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ স্টেশনের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা তিনটি বিষয় অবজারভেশনে নিয়েছি। যেহেতু সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকে নাস্তা তৈরি জন্য বাসায় গ্যাসের চুলা জ্বালান, এ সময় যদি গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকে অথবা চুলার লাইন লুজ কানেকশন থাকায় বাসার ভেতর গ্যাস জমে থাকে অথবা গ্যাসের বেশি চাপ থাকে তাহলে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে। এসব কারণ মাথায় নিয়ে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আসলে কোন কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তদন্তের পর জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, গ্যাস লাইনের লিকেজ অথবা লুজ কানেকশন থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা দেখেছি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওয়ালটা স্প্লিন্টারের মতো কাজ করেছে। যদি কোথাও গ্যাস জমে থাকে সেখানে এ ধরনের একটা বয়েল, এভাবে উত্তপ্ত হয়ে যায় এবং সেখানে অক্সিজেন কাটআপ হয়ে যায়। তখন সেখানে হাইড্রোজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্যাস মিলিয়ে শক্তি সঞ্চার হলে এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
অপরদিকে, বিস্ফোরক অধিদফতরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেনও গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত যে লাইনটি গেছে ওই লাইনে কোনও লিকেজ থাকতে পারে। ওই লিকেজ দিয়ে সারা রাত গ্যাস বের হয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। পরে সকালে আগুন ধরাতে গেলে এই বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, সব গ্যাস বিস্ফোরণে আগুন ধরে যাবে এটি ঠিক না। এটি আমাদের প্রাথমিক ধারণা। তদন্ত শেষে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এদিকে, ঘটনার পর একটি গণমাধ্যমকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস লাইন থেকেই চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু, ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক অধিদফতরের বক্তব্য নাকচ করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, সেপটিক ট্যাংকিতে গ্যাস জমার কারণে বিস্ফোরণটি ঘটেছে।
কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (বিপণন উত্তর ডিভিশন) আবু নসর মোহাম্মদ সালেহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ দুর্ঘটনার জন্য রাইজার বিস্ফোরণের কথা বলা হচ্ছে, এটি সঠিক নয়। গ্যাস লাইনের কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেনি। আমরা ধারণা করছি সেপটিক ট্যাংক থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর আমরা সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছি। যে বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে আমরা সেখানে গিয়ে দেখেছি, ওই বাসায় কোনও ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে ওই বাসায় অবশ্যই আগুন লাগার ঘটনা ঘটতো। আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, কর্ণফুলি গ্যাস কর্তৃপক্ষ এখন দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।