শিরোনাম :

  • মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

চবিতে ছাত্রলীগের এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কুপিয়েছে

চবি প্রতিনিধি |

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আবারও সংঘাত হয়েছে । রোববার রাতে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এক পক্ষের নেতা সুমন নাসির ও আবদুল্লাহ আল রায়হান রাফিকে মারধর এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা।

রাতে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। হাটহাজারী যাওয়ার পথে ওই দুই নেতাকে প্রতিপক্ষের কর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। বিষয়টি জানাজানি হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নেয় প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যরা। এ সময় হলের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। পাশাপাশি গোলচত্বরে পুলিশ বক্স, প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি ও পুলিশের চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়।

মারধরের শিকার দু’জনই চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসি গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর মারধরকারীরা সবাই ভিএপের অনুসারী। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে অবরোধের ডাক দিয়েছে সিএফসি গ্রুপ।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে রাত সাড়ে ৮টায় শহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে শাটল ট্রেনটি ছেড়ে যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েন শহরে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, শুক্রবার মধ্যরাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিএফসি ও ভিএপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের সাত কর্মী আহত হন। সিএফসি গ্রুপটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও ভিএপ গ্রুপ সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন দিন ধরে উত্তেজনা প্রশমন করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি।

সংঘর্ষের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, তাপস হত্যা মামলার আসামি মিজানুর রহমান ও প্রদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে। রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপ দেওয়ায় দু’জনই গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জড়িতদের আটক না করা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলবে।

তবে এ ঘটনার দায়ভার সভাপতি রেজাউল হককেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন ভিএপ পক্ষের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘তাদের কর্মীদের ওপর হামলায় কাউকে আটক করেনি পুলিশ। এতে জুনিয়রদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ফলে সম্পূর্ণ দায়ভার সভাপতিকেই নিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ বিব্রত। আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি। তবে আর নয়। ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রক্টরের গাড়িসহ অনেক কিছু ভাঙচুর করেছে। ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাতে চবি ক্যাম্পাসে অবস্থান করা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজা বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ক্যাম্পাসে শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি থমথমে।

২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের সামনে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার খুন হন। আহত হন আরও পাঁচ ছাত্র। বর্তমানে আদালতে মামলাটির বিচার চলছে। এ নিয়ে বিরোধে গত ২৮ ও ২৯ নভেম্বর দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হন। ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়ে বিপুলসংখ্যক দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এসব সরঞ্জাম উদ্ধারের এক দিনের মাথায় আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ।