আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার বিধবা মা
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি |
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে গিয়ে ঘটকসহ তার সঙ্গীদের গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার সন্তানের জননী এক বিধবা নারী।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) রাতে স্থানীয় পাঁচ লম্পটের লালসার শিকার হওয়া ওই বিধবা নারী বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে পাঁচ ধর্ষকের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, উপজেলার কুলতলীর অফেজউদ্দীনের ছেলে মহসীন হেসেন (৩০), রামচন্দ্রপুরের মুজিবর রহমানের ছেলে সফিকুল (২৪), মৃত আব্দুল দফাদারের ছেলে হান্নান (২৭), দক্ষিণ হাজীপুর দীঘির পাড় এলাকার আদম আলীর ছেলে সফিকুর রহমান বাবু (৩০) ও কাটাখালীর আব্দুস সাত্তার গাইনের ছেলে গোলাম রব্বানীর (২৩)।
জানা গেছে, উপজেলার শ্রীফলকাঠি গ্রামে বসবাসরত ওই নারী নিজের মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে কদমতলা এলাকায় যাওয়ার পর ঘটক ও তার চার সহযোগী কৌশলে তাকে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, নির্যাতিতার লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নেমেছে।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে পাঁচ ধর্ষকের একজন স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আত্মীয় হওয়ায় নির্যাতিতা নারীর পরিবারের সঙ্গে আপোষরফার প্রাথমিক চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও দরিদ্র ওই নারীর পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করছে।
নির্যাতনের শিকার নারী জানান, তার মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র দেখানোর কথা বলে ঘটক কুলতলী গ্রামের অফেজউদ্দীন গাজীর ছেলে মহসীন হোসেন তাকে কদমতলায় নিয়ে যায়। একপর্যায়ে আরও একজন ভালো পাত্রের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলার অজুহাতে বুধবার বিকেলে তাকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক (বাবু) এর সহায়তায় কুলতলী গ্রামে নিয়ে যায় মহসীন।
বিধবা ওই নারী আরও জানান, পথিমধ্যে সন্ধ্যা হওয়ার সুযোগে একই এলাকার একটি চিংড়ি ঘেরের বাসায় আটকে রেখে চার সহযোগীসহ মহসীন তাকে ধর্ষণ করেন।
নির্যাতনের শিকার নারীকে উদ্ধারকারী ঘের কর্মচারী আলমগীর হোসেন ও শুধাংসু মণ্ডল জানান, রাতে তারা পাহারার সময়ে অনতিদূরের একটি চিংড়ি ঘেরের বাসা থেকে ওই নারীর চিৎকার শুনতে পান। দ্রুত তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই সফিকুল, মহসীন, বাবু, গোলাম রব্বানী ও হান্নানসহ আরও দুইজনকে হেঁটে যেতে দেখেন।
পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার নারীকে উদ্ধার করে রাতে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ নজরুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যান তারা।
তারা আরও জানান, ঘটনাস্থলে তারা না পৌঁছালে ধর্ষকদের অপক্ষেমান আরও কয়েকজন সহযোগীর দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার শংকা ছিল ওই নারীর।
গ্রাম পুলিশ নজরুল ইসলাম জানান, রাতে স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার ঐ নারীকে তার (গ্রাম পুলিশ) বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পরে রাত গভীর হওয়াতে নিজের বাড়িতে রাখার পর দুপুরে শ্যামনগর থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি জানাজানি হতেই ধর্ষক সফিকুল ইসলামের মামা রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল খালেক ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টির মীমাংসা করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
ধর্ষণের শিকার নারীর বিষয়ে পুলিশকে রাতেই অবহিত করা মানবাধিকার কর্মী হাফিজুর রহমান নাইম জানান, ধর্ষণের শিকার নারীর কাছে বর্ণনা শুনে রাতেই স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে যেয়ে সত্যতা পান।
তিনি জানান, পাঁচ ধর্ষকের অন্যতম সফিকুল ইসলামের নিকটাত্মীয় এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ কারণে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এ ধর্ষণের ঘটনার তথ্য নিতে নুরনগর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পর তাদের পরিষদ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
হাফিজুর রহমান নাইম আরও জানান, অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়াতে দরিদ্র ও সহায় সম্বলহীন ওই নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া এমন দুঃসহ ঘটনার বিচার পাওয়া নিয়ে শুরুতেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মহসীন, গোলাম রব্বানী, বাবু ও হান্নান এবং সফিকুলসহ তাদের গ্রুপের ১৫-১৬ জন খুব দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। ইতোপূর্বে একাধিক ধর্ষণের ঘটনায় জড়ানো এই গ্রুপের দুই সদস্য এখন মাদক ব্যবসায় কারাগারে রয়েছে। প্রায় দেড় বছর আগে এই গ্রুপের দুই সদস্য স্থানীয় হাজীপুর গ্রামের এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খবরের শিরোনাম হয়। এছাড়া তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী কয়েক বছর আগে নুরনগর আশালতা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়।