গাড়ি থেকে নামার পরই মেজর (অব) সিনহাকে গুলি করেন এসআই লিয়াকত!

কক্সবাজার প্রতিনিধি |

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার পরপরই বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী তাকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন। একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, এসআই লিয়াকত কোনো প্রকার কথাবার্তা না বলেই মেজর (অব.) রাশেদকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। 

গত ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে মেজর (অব.) রাশেদ খান টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় শামলাপুর অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ডকুমেন্টারি ফিল্মের শুটিং শেষে পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে।

মেজর সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপসচিব মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন। 

জানা যায়, মেজর (অব.) রাশেদ গত ৩ জুলাই ঢাকা হতে ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরির জন্য কক্সবাজারে যান। তার সঙ্গে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীও যান। তারা প্রায় এক মাস যাবত কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং সম্পন্ন করেন। গত ৩১ জুলাই সঙ্গীয় সিফাতকে নিয়ে তিনি শামলাপুর অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় যান। এই সময় মেজর (অব.) রাশেদ ফুল হাতা কম্ব্যাট গেঞ্জি, কম্ব্যাট ট্রাউজার এবং ডেজার্ট বুট পরিহিত ছিলেন। রাতের শুটিং শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে তারা দুইজন পাহাড় থেকে নামার সময় দুইতিনজন স্থানীয় ব্যক্তি তাদের দেখে ডাকাত সন্দেহে পুলিশকে অবহিত করে।

জানা যায়, মেজর (অব.) রাশেদ সিফাতকে নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে নিজস্ব প্রাইভেট কারযোগে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা করেন। শামলাপুরের পূর্বে বিজিবি চেকপোস্টে তাদেরকে তল্লাশি করার জন্য থামানো হয় এবং পরিচয় প্রাপ্তির পর ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে ডাকাত আসছে খবর পেয়ে এসআই লিয়াকত ফোর্স নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। রাত ৯টার দিকে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে আসার পর তিনি রাশেদের গাড়ি থামান। মেজর (অব.) রাশেদ গাড়ি থামিয়ে তাদেরকে পরিচয় প্রদান করলে প্রথমে তাদেরকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। সিফাত হাত উচু করে গাড়ি থেকে নেমে পেছনের দিকে যান। মেজর (অব.) রাশেদ গাড়ি থেকে হাত উচু করে নামার পরপরই এসআই লিয়াকত তাকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন।

বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, এসআই লিয়াকত কোন কথাবার্তা না বলেই গাড়ি থেকে নামার পরপরই মেজর (অব.) সিনহাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং সিফাতকে আটক করে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যান। 

সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় জনগণ এবং সার্জেন্ট আইয়ুব আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেজর (অব.) রাশেদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। সার্জেন্ট আইয়ুব আলী ঘটনার ভিডিও করতে চাইলে পুলিশ তার পরিচয় জানতে চায়। তিনি পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ তার নিকট থেকে মোবাইল ফোন এবং পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে পুলিশের মাধ্যমে একটি মিনি ট্রাক ঘটনাস্থলে আনা হয় এবং রাত ১০টার দিকে মিনি ট্রাকটি মেজর (অব.) রাশেদকে নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়ানা করে। প্রায় এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর ট্রাকটি সদর হাসপাতালে পৌঁছালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ডিএন/কেএন/বিএইচ/০৫ঃ৩৫এএম/০৩০৮২০২০-১

Print Friendly, PDF & Email